সুসিলা গুপ্তা,কলকাতা: ব্রোঞ্জ যুগ থেকেই মেহেদি দিয়ে হাত রাঙানো শিখেছে মানুষ। উৎসব এলে মেহেদির কদর বেড়ে যায় আরও কয়েক গুণ। মেহেদি দিয়ে হাত রাঙানো হবে কোন নকশায়, ট্রেন্ড কী? কী নকশা করলে সবার থেকে আলাদা মনে হবে, নাকি ট্র্যাডিশনাল নকশায় সাজিয়ে নেবো হাত, এমন অনেক প্রশ্নই তো মাথায় আসে। ঘুরে ফিরে মনের অন্দরে আরও কত প্রশ্ন ঠাঁই পায়! সবকিছু ছাপিয়ে প্রথম কথা হলো, আমি কী চাই, কোন নকশা নিজের কাছে স্বস্তির মনে হয়, সেদিকটায় আগে খেয়াল করা উচিত।’ বলছিলেন নভীনস বিউটি অ্যান্ড অ্যারোমা সেন্টারের স্বত্বাধিকারী আমিনা হক।
হাতের আকার বা আকৃতি সবার এক রকম হয় না। কারও হাত লম্বাটে আবার কারও হাত গোলাকার। সাধারণত লম্বা হাতের সঙ্গে যে কোনো নকশা মানিয়ে যায় আর গোলাকার হাতে একটু হালকা ধাঁচের নকশা করলে ভালো লাগে।
চাইলে তুমি দুই হাত ঘন নকশায় রাঙাতে পারো। সে ক্ষেত্রে ময়ূর, কলকা এবং ফুলেল মোটিফের নকশা হতে পারে মানানসই।আর ঘন নকশার সঙ্গে নখের চারপাশে গোল নকশায় মেহেদি লাগানোর চল, সে তো পুরোনো। কিন্তু আবেদন অফুরান। অনেকে হাতের কনুই পর্যন্ত মেহেদির রঙে রাঙায়। আমিনা হকের পরামর্শ হলো, ট্র্যাডিশনাল মোটিফে হাতে নকশা করা যেতে পারে। অ্যারাবিয়ান স্টাইল বেশ জনপ্রিয়।এতে একটু ফাঁকা জায়গা রেখে ফুলেল মোটিফ করা যায়। আবার ভারতীয় নকশার কদরও আছে কারও কারও কাছে। কেননা নকশাগুলো অনেক বেশি সূক্ষ্ম হয়।বয়স ভেদে নকশার খুব একটা পার্থক্য আসে না। তবে যারা বয়সে একটু ছোট, তারা অপেক্ষাকৃত ঘনভাবেই লাগাতে পছন্দ করে।
কনের মেহেদি
বিয়ের মেহেদি কনুই পর্যন্ত লাগাতে সবাই পছন্দ করে। অনেকে ব্লাউজের মাপের সঙ্গে মিলিয়ে থ্রি কোয়ার্টার পর্যন্ত মেহেদি লাগায়। বিয়ের আসরে লালের ছটাই প্রাধান্য পায় বেশি। মেহেদির বেলাতেও তাই। কনের হাতে লাল রংটাই শোভা পায় বেশি। কালো রং এখানে অনেকটাই বেমানান লাগে। এ কারণে কনের হাতে কালো মেহেদি কম রাখলেই ভালো দেখাবে বলে জানান রূপবিশেষজ্ঞা মত দেন।
হলুদের অনুষ্ঠানে
হলুদের আগে মেহেদি লাগানো হলে তার রং অনেকটা বিবর্ণ হয়ে আসে বিয়ের আসরে। রং কম সময় থাকে বলে বিয়ের অনুষ্ঠানের আগের দিন মেহেদি লাগানোই ভালো। দরকার মনে করলে মেহেদির নকশার ওপরই পছন্দমতো রং দিয়ে আউটলাইন করে নেওয়া যায়। গায়ে হলুদের দিন আলতা দিয়ে হাত রাঙানো যেতে পারে। শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে নেইলপলিশ বা রঙের মাধ্যমে নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়।
গাঢ় রং যদি চাও
দীর্ঘ সময় হাতে মেহেদি রাখতে হবে হাতে মেহেদি লাগানোর পরে মেহেদি শুকিয়ে আসবে কিন্তু ধুয়ে ফেলা যাবে না। ঘষে ঘষে তুলে ফেলতে হবে। ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা অপেক্ষা করো, আরও ভালো হয় যদি ১২ ঘণ্টা রাখতে পারো। দেখবে মেহেদির রং লাল টুকটুকে হয়ে গেছে।
মেহেদির ওপর চিনিপানি দাও
হাতে মেহেদি লাগিয়ে অনেক সময় অপেক্ষা করা, বিষয়টি বিরক্তির কারণ হতে পারে। যদি এই বিরক্তি পোহাতে না চাও তাহলে অল্প পরিমাণ পানিতে চিনি মিশিয়ে জ্বাল দিয়ে নাও। তারপরে চিনিপানি ঠান্ডা করে তার সঙ্গে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে নাও। হাতে মেহেদি লাগানোর পরে এই লেবুরস মেশানো চিনিপানি তুলোর বলে করে মেহেদির ওপর লাগিয়ে দেবে। একবার দুবার নয়, মেহেদি শুকিয়ে এলে আবার লাগাতে হবে। এভাবে বারবার মিশ্রণটি মেহেদির ওপর লাগিয়ে হাতে পেতে পারো মনের মতো মেহেদির রং।
লবঙ্গের ভাপ
মেহেদি দেওয়া হাতে লবঙ্গের ভাপ দিতে পারো। সে জন্য আগে চিনিপানি ও লেবুর রসের মিশ্রণ হাতে লাগানোর মেহেদির ওপর দিতে হবে। আর মেহেদি দেওয়া হাতে লবঙ্গের ভাপ দেওয়ার জন্য একটি তাওয়ায় কিছু পরিমাণ লবঙ্গ নিয়ে অল্প আঁচে জ্বাল দাও। এবার হাতটি সাবধানে তাওয়ার ওপর রাখো। খেয়াল রাখবে যেন লবঙ্গের ভাপ তোমার মেহেদিতে লাগে। আর সাবধান থাকবে হাত যেন পুড়ে না যায়। এই ভাপ লেবু চিনির মিশ্রণ শুকিয়ে ফেলবে। এই কাজটি মেহেদি তুলে ফেলার পরও করতে পারো।
অলিভ অয়েল ব্যবহার
মেহেদি তুলে ফেলার পর অলিভ অয়েল হাতে মাখতে পারো। এই তেল মেহেদির রং ভেতর থেকে উন্নত করে। আর হ্যাঁ ভিক্স অথবা টাইগার বামও হাতে মাখা যেতে পারে।
মনে রেখো
১. মেহেদি দেওয়ার পর অনেকে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে থাকে যা কখনোই করবে না। সাবানের ক্ষারীয় উপাদান মেহেদির রং ফিকে করে দেয়।
২. মেহেদি দেওয়ার আগে ওঅ্যাক্সিং করাবে না। ওঅ্যাক্সিং করালে ত্বক মসৃণ হয়ে যায়। ফলে মেহেদি রং ভালোভাবে বসে না এবং রং গাঢ় হয় না।
৩. মেহেদি দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই হাত ধুয়ে ফেলবে না। কমপক্ষে ছয় ঘণ্টা মেহেদি হাতে রাখার চেষ্টা করো। সম্ভব হলে রাতে মেহেদি দিয়ে পরের দিন সকালে তা তুলে ফেলো। গোসলের কাজটা মেহেদি দেওয়ার পূর্বে শেষ করে ফেলো। মনে রাখবে, মেহেদি যত বেশি সময় হাতে রাখবে, তত বেশি গাঢ় রং হবে।
৪. চিনি, লেবুর পানি মেহেদির রংকে গাঢ় করে থাকে। কিন্তু খুব বেশি ব্যবহারে মেহেদি খয়েরি রং হয়ে যায়। যা দেখতে একদমই ভালো না।
৫. মেহেদি শুকানোর জন্য কখনোই হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করবে না। এতে ডিজাইন নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। প্রাকৃতিকভাবে মেহেদি শুকাতে দাও।
৬. মেহেদি দেওয়ার আগে খুব বেশি পানি বা পানিজাতীয় খাবার খাবে না।
৭. হালকা বা আবছা আলোর মধ্যে মেহেদি দেবে না। ভালো মেহেদি ডিজাইনের জন্য পর্যাপ্ত আলোর প্রয়োজন।
৮. লেবুতে রস লাগালে যাদের অ্যালার্জি বাড়ে তারা অনেক সময় সরিষার তেল ব্যবহার করে থাকে- মেহেদি রং গাঢ় করার জন্য। তেল ব্যবহারে হাতের শুষ্কতা অনেকটাই কমে যায়। তবে তেল ব্যবহারের আগে এর মান সম্পর্কে নিশ্চত হয়ে নেবে।
৯. অনেকে মেহেদি তেল ব্যবহার করে। মেহেদি তেল কেনার আগে এর মেয়াদ এবং তৈরির উপাদান দেখে নেবে। এটি মেহেদি লাগানোর আগে ব্যবহার করতে হয়। কখনোই মেহেদির লাগানোর পর এই তেল ব্যবহার করবে না।
১০.অনেকের হাতের ত্বক নমনীয় হয়ে থাকে। বাজারের মেহেদি লাগালে অনেক সময় র্যাশের সমস্যা দেখা দেয়। এ সময় আধা চামচ দুধ এবং আধা চামচ মধু মিশিয়ে র্যাশের জায়গায় লাগাও। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফল পাবে। হাতের যে জায়গায় চামড়া পাতলা অর্থাৎ ওপরের দিকের অংশে, সেখানে প্রথমেই কিছুটা মেহেদি লাগিয়ে দেখতে পারো। র্যাশের সমস্যা দেখা গেলে মেহেদি না লাগানোই ভালো।
Leave a Reply