আলি আকবর খান: গুনাহের প্রতি মানুষের আকর্ষণ স্বভাবজাত। শয়তানের ধোঁকা, নফসের প্ররোচনা, পরিবেশের তাড়না, মানুষকে বিভিন্ন গুনাহের কাজে জড়িয়ে ফেলে।মানুষের এই পাপ প্রবণতার বিষয়ে এক হাদিসে রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জাহান্নামকে ঘিরে রাখা হয়েছে আকর্ষণীয় কাজকর্ম দিয়ে আর জান্নাতকে ঘিরে রাখা হয়েছে নিরস কাজকর্ম দিয়ে। (বুখারি, খণ্ড ৭, ২৪৫৫)
মানুষ যেসব গুনাহের কাজে লিপ্ত হয় তা দুই প্রকার। ১. কবিরা গুনাহ বা বড় গুনাহ। ২. সগিরা গুনাহ বা ছোট গুনাহ। জীবনে চলার পথে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় মানুষ এমন অনেক গুনাহ করে থাকে, যেগুলো আপাত দৃষ্টিতে সগিরা গুনাহ মনে হলেও নানা কারণে সেগুলো কবিরা গুনাহ হয়ে যায়। সগিরা গুনাহ কবিরা গুনাহে রূপান্তরের ৫ টি কারণ এখানে তুলে ধরা হলো-
১. গুনাহকে ছোট মনে করা
গুনাহের কাজে লিপ্ত হওয়া এমনিতেই অপরাধ। আর গুনাহকে ছোট মনে করা আরও বড় অপরাধ। হজরত আলী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এক হাদিসে বলেছেন, ‘মানুষ যে গুনাহকে ছোট মনে করে, সেটাই আল্লাহ তায়ালার কাছে বড়। আর যেগুলোকে মানুষ বড় মনে করে, সেটাই আল্লাহ তায়ালার কাছে ছোট।’
আরেক হাদিসে হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা অনেক গুনাহকে চুলের চেয়েও ছোট মনে কর। অথচ আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে সেগুলোকে ধ্বংসাত্মক গুনাহ মনে করতাম।’ (বুখারি, হাদিস, ৬১২৭)
২.সগিরা গুনাহ বারবার করা
সগিরা গুনাহ বারবার করলে তা কবিরা গুনাহ হয়ে যায়। এ ব্যাপারে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত আয়শা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে একদিন বললেন, ‘গুনাহকে ছোট ও তুচ্ছ মনে করা থেকে নিজেকে রক্ষা কর। কারণ প্রতিটা গুনাহ সংরক্ষণের জন্য আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে ফেরেশতা নিযুক্ত আছে।’(তিরমিজি, হাদিস, ৪১৪৩)
আরেক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সগিরা গুনাহ বার বার করলে তা সগিরা থাকে না; কবিরা হয়ে যায়। আর ইস্তেগফারের মাধ্যমে কবিরা গুনাহ কবিরা থাকে না।’(শুআবুল ঈমান, হাদিস, ৭২৬)
৩. অনুসরণীয় ব্যক্তিদের সগিরা গুনাহ কবিরা হয়ে যায়
আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ ও সমাজের অনুসরণীয় ব্যক্তিদের সগিরা গুনাজ কবিরা হয়ে যায়। কারণ তাদের ছোট গুনাহগুলো দেখে অন্যরা গুনাহ করার দুঃসাহস পায়। এভাবে সমাজের সব জায়গায় সেই গুনাহ ছড়িয়ে পড়ে।
এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ প্রকাশ্য অশ্লীলতায় লিপ্ত হলে, তার শাস্তি দ্বিগুণ বৃদ্ধি করে দেয়া হবে। আর আল্লাহর পক্ষে তা অতি সহজ।’(সূরা আহযাব, আয়াত, ২৯)
৪. গুনাহ করে খুশি হওয়া
শয়তানের ধোঁকায় পড়ে গুনাহ হয়ে যেতে পারে। তাই বলে ইচ্ছা করে গুনাহ করা, গুনাহ করে খুশি হওয়া কোনোভাবে কাম্য নয়। কোনো ব্যক্তি যখন কোনো সগিরা গুনাহ করে কবিরা গুনাহে লিপ্ত হয় তখন আর তা সগির গুনাহ থাকে না, কবিরা গুনাহে পরিণত হয়ে যায়।
৫. আল্লাহর সহিষ্ণুতায় ধোঁকা খাওয়া
যারা নিজ সংশোধন ও আখেরাতের চিন্তা থেকে সম্পূর্ণ উদাসীন, শুধু দুনিয়ার জীবন নিয়ে ব্যস্ত। এসবের পরেও যখন আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রতি পরম দয়া ও সহিষ্ণু আচরণ করেন, তখন এটাই তাদের জন্য এক অদৃশ্য পর্দা হয়ে দাঁড়ায়। যে কারণে তারা অবলীলায় ছোট-ছোট গুনাহ করে থাকে। আর এভাবে অবলীলায় করতে থাকা সগিরা গুনাহ কবিরা গুনাহে পরিণত হয়ে যায়। তাই প্রত্যেক মুমিন-মুসলিমের এই ব্যাপারে সর্তক থাকা উচিত।
Leave a Reply