সানজিদা কুররাতাইন: মানবজাতির জন্য সৃষ্টিকর্তা কতৃক মনোনীত একমাত্র জীবন বিধানের নাম ইসলাম। আর ইসলামের সবচেয়ে সম্মানিত গুণ হলো চারিত্রিক পবিত্রতা। যা অর্জিত হয় লজ্জাশীলতার দ্বারা। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন ‘চারটি জিনিস নবিদের সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত তার মধ্যে লজ্জাশীলতা একটি’ (তিরমিজি, হাদিস : ১০৮০)।
এটা অবশ্যই স্বীকার করতে হয় যে, লজ্জাশীলতা এমন একটি গুণ, যা পৃথিবীর প্রতিটি দেশের প্রতিটি মানুষই পছন্দ করে। একজন মানুষ সমাজে তখনই সম্মানিত হয় যখন তার মধ্যে এ গুণটি পরিপূর্ণভাবে বিদ্যমান থাকে। চারিত্রিক দিক দিয়ে লজ্জাশীলতা একজন ব্যক্তিকে সর্বদা অন্যের থেকে এক ধাপ এগিয়ে রাখে। লজ্জাশীলতার কারণে একজন ব্যক্তির চরিত্র যতটা উন্নত হয় তা তথাকথিত সামাজিকতার মাধ্যমে সম্ভব নয়। লজ্জাশীলতা কখনই একজন মানুষকে পেছনে ফেলে দেয় না; বরং লজ্জাশীলতা সর্বদা কল্যাণ বয়ে আনে। হাদিসে এসেছে, ‘কোনো কিছুতে অশ্লীলতা তাকে শুধু কলুষিত করে আর কোনো কিছুতে লজ্জা তাকে শুধু সৌন্দর্যমণ্ডিত করে।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১২৬৮৯)।
লজ্জাশীলতার গুণ আমাদের প্রিয় নবি ও রাসূল হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সবচেয়ে পছন্দনীয় অভ্যাস। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূল (সা.) গৃহবাসিনী পর্দানশীন কুমারীদের চেয়েও বেশি লজ্জাশীল ছিলেন। অন্য রেওয়ায়েতে আছে, যখন রাসূল (সা.) কোনো কিছু অপছন্দ করতেন, তা চেহারায় বোঝা যেত।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৫৬২)। সাহাবায়ে কেরামরা এ গুণটি নিজেদের মধ্যে সঠিকভাবে অর্জন করতে পেরেছিলেন। ইসলামের তৃতীয় খলিফা হজরত উসমান (রা.) ছিলেন সাহাবিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লজ্জাশীল।
লজ্জাশীলতার গুণ যখন সমাজ থেকে হারিয়ে যাবে তখন মানুষ যা ইচ্ছা তাই করতে পারবে। কখনো কোনো বেয়াদবি কাজ তার কাছে খারাপ মনে হবে না। ইবনু মাসঊদ (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘পূর্ববর্তী নবি থেকে লোকেরা যা পেয়েছে এবং আজও যা বিদ্যমান তা হলো যখন তোমার লজ্জা থাকবে না, তখন তুমি যা ইচ্ছা তাই করতে পারবে’ (বুখারি, মিশকাত হা/৫০৭২)। হাদিসের মান : সহিহ হাদিস। তাহলে অবশ্যই বোঝা গেল ও লজ্জাশীলতা কখনো মানুষকে পিছিয়ে দেয় না। বরং এ গুণের বিলুপ্তি সমাজকে ধ্বংস করে দেয়। তাই একজন মুমিন হিসাবে লজ্জাশীল হওয়াই সবচেয়ে সুন্দর গুণ।
Leave a Reply