1. admin@ajkallondon.com : Ajkal London : Ajkal London
  2. ajkallondon@gmail.com : Dev : Dev
নারী এগিয়েছে বহুদূর - Ajkal London
রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:২৮ পূর্বাহ্ন

নারী এগিয়েছে বহুদূর

রিপোর্টার নাম
  • প্রকাশিত : রবিবার, ১ আগস্ট, ২০২১
  • ২৭৭ বার ভিউ

কাজী রুনু বিলকিস .ঢাকা : সরকারের মুখটাই কেবল নারীর বললে হবে না। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নামও এসেছে বিশ্বের শক্তিশালী ও প্রভাবশালী শাসকের খাতায়! তাও সামনের দিকে! সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের বিস্ময়কর সাফল্যের পেছনে নারীই অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। দুঃখের রজনী যত দীর্ঘই হোক না কেন ভোর হবেই।
আমাদের মাকে আমরা বলতাম তুমি
বাবাকে আপনি
আমাদের মা গরীব প্রজার মতো দাঁড়াতো, বাবার সামনে কথা বলতে গিয়ে কখনোই কথা শেষ করে উঠতে পারতো না।
বাবা ছিলেন অনেকটা সিংহের মতো
তার গর্জনে আমরা কাঁপতে থাকতাম।
বাবা ছিলেন অনেকটা আড়িয়াল বিলের
প্রচণ্ড চিলের মতো
তার ছায়া দেখলেই মুরগীর বাচ্চার মতো
আমরা মায়ের ডানার নীচে লুকিয়ে পড়তাম।
-হুমায়ুন আজাদ।
এটা একটি সমাজ চিত্র। কবি মায়েদের অবস্থানটা তুলে ধরেছেন। সেই রাম মোহন, ঈশ্বর চন্দ্র থেকে হালের সরকারি বেসরকারি দেশী বিদেশী অনেক সংস্থা অবিরাম কাজ করে চলেছে নারীর ভাগ্য পরিবর্তনের। নারীদের দুঃখ গাথার জরীপের তথ্য বিশ্লেষণে আপাতত না গিয়ে আমি খুব সরলভাবে জীবনকে যদি দেখি, যদি আমার মায়েদের জীবনের সাথে তুলনামূলক বিচার করি তাহলে উল্লসিত হওয়ার কারণ আছে। আবার আমাদের মায়েদের জীবন হয়তো বা আমাদের দাদী নানীর জীবন থেকে কিছুটা হলেও উন্নততর ছিল। আমরা ভাল আছি, এভাবে ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে গড়তে গড়তে নারীরা একদিন সত্যিকারের মানুষ হয়ে উঠবে। আজকালকার বাবাগুলো চেষ্টা করেও আড়িয়াল খার চিলের মত হয়ে উঠতে পারে না। মারাও প্রজার মত দাঁড়িয়ে থাকে না। মা’রা এখন শুধু বলতে পারে না অনেক কিছুই করতেও পারেন স্বাধীনভাবে। অর্থাৎ আমরা শৃঙ্খল ভেঙ্গেছি। আমাদের মায়েদের যাপিত জীবন থেকে আমাদের জীবন অনেক বেশি শৃঙ্খলমুক্ত, তাদের জীবন ছিল আষ্টপৃষ্ঠে বাঁধা সংসারে। ডজনে ডজনে সন্তান প্রায় প্রতি ঘরে ঘরে। রাঁধার পরে খাওয়া আর খাওয়ার পরে রাঁধার চক্রে। তারা কি কখনো ভেবেছিল জীবনের অর্থ কি? নীরব নিথর ইচ্ছেগুলো কখনো ভাষা পেতো কি? ব্যতিক্রম হয়তো কিছু ছিল। বিদ্রোহীও হয়তো ছিল। সংখ্যা এত কম যে উল্লেখ করার মত নয়। কর্তার ইচ্ছেই কর্ম। স্বামীর মুখের ওপর কথা বলাও ছিল এক ধরনের গর্হিত কাজ। ঘোরতর অনিয়ম। প্রকৃত নারীর সংজ্ঞা ছিল (এখনও কি?) স্বামীকে সন্তুষ্ট রাখা, সন্তানের জন্ম দেওয়া, স্বামীর কথার উপর কথা না বলা, প্রথম মাসিক শুরু হওয়ার সাথে সাথে গর্ভধারণ করা ছিল তাদের বেশীর ভাগেরই নিয়তি। স্বামীদের বয়স হতো স্ত্রীদের চেয়ে দুই গুণ তিনগুণ কিংবা তার চেয়েও বেশি। স্বাভাবিক ভাবেই বিধবা হয়ে পড়তো অকালেই। আর সে কারণেই একটা কথার খুব প্রচলন ছিল নারীদের ক্ষেত্রে ‘কুড়িতেই বুড়ি’। বৈধব্যের সিল মারা জীবনে আনন্দ আর প্রবেশ করতে পারতো না শরীর ও মনে। নিজেই হয়ে পড়তো একখানা সাদা থান। ইচ্ছেগুলোও সব সাদা সাদা। লাল নীল সব স্বপ্নগুলো দূরে বহু দূরে…।
সনাতন ধর্মের নারীদের জীবন তো আরও দুর্বিষহ! খাওয়া পরা নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে চুল পর্যন্ত ফেলে দিতে হতো। মাতাল হয়ে সহমরণে যেতে হয়না এও বা কম কিসে। আমরা যেন হঠাৎই জেগে উঠেছি। নিজেদের মত করে চলতে পারছি মোটামুটি নারীর বোরিং লাইফ থেকে বেরিয়ে এসেছি। আয় রোজগার করছি। নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখেছি। সবক্ষেত্রে নারীর অর্জনের খাতায় নাম উঠছে থরথর করে। সংসারেও সিদ্ধান্ত গ্রহণের (সব ক্ষেত্রে না হলেও) কিছু কিছু ব্যাপারে ক্ষমতা পেয়েছে। সংসার নিয়ন্ত্রণ করার অধিকারও প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। বিবিএসের জরিপে যতই যা বলা হোক আমরা এখন যারা পঞ্চাশোর্ধ তাদের জীবনে তো একটা পরিবর্তন এসেছে। ঘর সামলিয়ে নিজের প্রতি মনোযোগী হয়েছি।
আশে পাশের বিউটি পার্লারগুলো তারই একটি প্রমাণ। ফেসিয়াল, পেডিকিওর, মেনিকিওর, চুল থেকে নখ পর্যন্ত কত সেবা আমরা নিচ্ছি। কুড়িতে বুড়ি তো নই এমন কি ষাট পেরিয়েও আমরা বুড়ি হতে রাজি নই। ফিট থাকার জন্য ডায়েট ব্যায়াম ইয়াগো, ট্রেডমিল, ডার্মোটলিস্ট সবই আমাদের আয়ত্তে। ক্লাব পার্টি, ফেসবুক, আড্ডা, কোনটাতে আর নিষেধাজ্ঞার সিল মারা নেই। দিল্লী হিল্লী শুধু নয় পৃথিবীর সব প্রান্তেই, এখন নারীরা একা যাওয়ার সামর্থ্য অর্জন করেছে। দীর্ঘ দিনের নারীর শাসনের প্রভাব যে একেবারে পড়েনি এমন কথা কেউ জোর দিয়ে বলতে পারবে না। সরকারের মুখটাই কেবল নারীর বললে হবে না। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নামও এসেছে বিশ্বের শক্তিশালী ও প্রভাবশালী শাসকের খাতায়! তাও সামনের দিকে! সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের বিস্ময়কর সাফল্যের পেছনে নারীই অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। দুঃখের রজনী যত দীর্ঘই হোক না কেন ভোর হবেই। আমাদের প্রজন্মের আমরা বেশ ভাল আছি। বেশীকম বিতর্কে না গিয়ে নির্দ্বিধায় বলতে পারি আমাদের স্বাধীনতা অনেক। আমাদের ইচ্ছেঘুড়ির নাটাই আমাদেরই হাতে। কেউ যদি বলেন তোমরা ক্ষুদ্র একটি অংশ, বৃহৎ সমাজের প্রতিনিধিত্ব করো না। আমি সবিনয়ে দ্বিমত করব। ধর্ষণ ও খুনের যে চিত্রটি আমাদের ব্যতিব্যস্ত করছে সেটি অন্য বাস্তবতা। আমাদের নৈতিকতায় যে ধস নেমেছে সেটা সার্বিক সমাজকে প্রভাবিত করছে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সেটার ফল ভোগ করছে। সবচেয়ে বড় কথা আমরা আইনের শাসন থেকে বঞ্চিত।
আমরা পিছনের দিকে তাকিয়ে যদি নিজেদের দিকে একবার তাকাই তাহলে বুঝতে পারব কতটা এগিয়েছি। যাত্রা শুরু। আমাদের পরের প্রজন্মরা ক্রমশ দূরত্ব ঘুচিয়ে আনবে নারী পুরুষের লৈঙ্গিক বৈষম্যে।

Google News

নিউজ শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর