কুরআন অবতীর্ণের মাস : রমজান মাসে পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘রমজান মাস, যে মাসে কুরআন নাজিল করা হয়েছে, যা আদ্যোপান্ত হেদায়াত এবং এমন সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলি সংবলিত, যা সঠিক পথ দেখায় এবং সত্য ও মিথ্যার মধ্যে চূড়ান্ত ফয়সালা করে দেয়। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তিই এ মাস পাবে, সে যেন এ সময় অবশ্যই রোজা রাখে।’ (বাকারা : ১৮৫)
লাইলাতুল কদরের মাস : রমজান মাসেই লাইলাতুল কদর লাভ হয়। আল্লাহ তায়ালা রমজান মাসের ফজিলত বৃদ্ধি করেছেন লাইলাতুল কদরের মাধ্যমে। এই রাতে মানুষের পাপগুলো ক্ষমা করা হয়। সওয়াব বৃদ্ধি করা হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় আমি এটা (কুরআন) শবে কদরে নাজিল করেছি। তুমি কি জানো শবে কদর কী? শবে কদর এক হাজার মাস অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ। সে রাতে ফেরেশতাগণ ও রুহ প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে অবতীর্ণ হয়। সে রাত আদ্যোপান্ত শান্তিপূর্ণ; ফজরের আবির্ভাব পর্যন্ত।’ (সুরা কদর : ১-৫)
জাহান্নামের দরজা বন্ধের মাস : রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘রমজান মাস আগমন করলে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানদের বেড়ি পরিয়ে রাখা হয়।’ (মুসলিম : ১০৭৯)
জাহান্নামিদের মুক্তিদানের মাস : আবু সাইদ খুদরি (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা রমজান মাসের প্রতিদিন ও রাতে জাহান্নামিদের মুক্তি দেন। রমজানের প্রতিদিন ও রাতে মুসলমানের দোয়া কবুল করা হয়।’ (মুসনাদে আহমদ : ৬৬৪)
গুনাহের কাফফারার মাস : হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বান্দা কবিরা গুনাহে লিপ্ত না হলে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে অন্য জুমা এবং এক রমজান থেকে অন্য রমজান তার মধ্যবর্তী গুনাহগুলোর কাফফারা হয়ে যায়।’ (মুসলিম : ২৩৩)
গুনাহ মাফের মাস : হাদিসে এসেছে, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবে আশায় রমজান মাসে রোজা পালন করবে, তার পেছনের সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবে আশায় লাইলাতুল কদরে ইবাদত করবে, তারও পেছনের সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।’ (বুখারি : ২০১৪)
জান্নাতে লাভের মাস : জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, ‘এক ব্যক্তি নবী করিম (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, যদি আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করি, রমজান মাসে রোজা পালন করি, হালালকে হালাল মনে করি, হারামকে হারাম জ্ঞান করি এবং এসবে কোনো বৃদ্ধি না ঘটাই, তা হলে কি আমি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব? নবী (সা.) বললেন, হ্যাঁ, পারবে। লোকটি বলল, আল্লাহর শপথ! আমি কোনো কিছু বৃদ্ধি করব না।’ (মুসলিম : ১৫)
হজের সওয়াব লাভের মাস : রমজান মাসে ওমরাহ পালন করা অন্য মাসে হজ পালন করার সমান সওয়াব। নবী করিম (সা.) হজ সম্পন্ন করে ফিরে এসে উম্মে সিনান নামক আনসারি মহিলা সাহাবিকে বলেছিলেন, ‘তুমি আমাদের সঙ্গে হজ করলে না কেন? মহিলা সাহাবি বললেন, আমাদের দুটি উট। আমার স্বামী একটি উটে হজে গমন করেছেন। আরেকটি আমাদের জমিনে পানি দেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে (এ জন্য আমি আপনার সঙ্গে হজে যেতে পারিনি)। নবী (সা.) বললেন, তুমি রমজান মাসে ওমরাহ হজ আদায় করে নিও। রমজান মাসে ওমরাহ আদায় করা মূল হজ আদায়ের ন্যায় অথবা আমার সঙ্গে হজ আদায় করার ন্যায়।’ (বুখারি : ১৮৬৩)
রোজা ও কুরআনের সুপারিশ : রোজা ও কুরআন রোজাদারের জন্য কেয়ামতের ময়দানের সুপারিশ করবে। জান্নাতে নিয়ে যাবে। নবী (সা.) বলেছেন, ‘রোজা এবং কুরআন কেয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমি তাকে খাবার এবং শারীরিক চাহিদা থেকে দিনের বেলায় বিরত রেখেছিলাম। তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। কুরআন বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমি তাকে রাতে ঘুমানো থেকে বিরত রেখেছিলাম। তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। সুতরাং রোজা ও কুরআনের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। (মুসনাদে আহমদ : ৬৫৮৯)
জান্নাতে বাড়িপ্রাপ্তির মাস : রোজার মাধ্যমে জান্নাতে সম্মান বৃদ্ধি ঘটে। নবী (সা.) বলেছেন, ‘জান্নাতে এমন ঘর রয়েছে, যার বাইরে থেকে ভেতর এবং ভেতর থেকে বাইরের দৃশ্য দেখা যায়। একজন গ্রাম্য সাহাবি দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এই ঘর কার জন্য? নবী (সা.) উত্তর দিলেন, যে ব্যক্তি উত্তম ও ভালো কথা বলে, মানুষকে খাবার দান করে, নিয়মিত রোজা পালন করে এবং মানুষ যখন রাতে ঘুমিয়ে থাকে তখন নামাজ আদায় করে (তার জন্য এই ঘর)।’ (তিরমিজি : ১৯৮৪)
Leave a Reply