নিউইয়র্ক প্রতিনিধি : যুক্তরাষ্ট্র সফররত গণঅধিকার পরিষদের আহবায়ক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া বলেছেন, বাংলাদেশের হারানো গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হলে দেশের সাধারণ মানুষের পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভূমিকা রাখতে হবে। মার্কিন রাজনীতিবিদদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথা জানিয়ে তাদের মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে হবে। সুষ্ঠ নির্বাচন হলেই দেশে হারানো গণতন্ত্র ফিরে আসবে। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
স্থানীয় সময় শনিবার দুপুরে উত্তর আমেরিকার বাংলাদেশ প্রগতিশীল জোট (বাংলাদেশ প্রোগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স অব নর্থ আমেরিকা) আয়োজিত যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের ক্যামব্রিজের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়লসটন হলের ফং মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে চ্যালেঞ্জ ও উপায়’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
আজাদ খানের সঞ্চালনায় সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ প্রোগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স অব নর্থ আমেরিকার (বিডিপানা) সাধারণ সম্পাদক তানভির নেওয়াজ। তিনি বক্তবের মাধ্যমে দেশের বিভিন্নখাতে সরকারের নানা দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বৃহৎ সেতুর নির্মাণ খরচের কথা তুলে ধরে পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যাপকহারে দুর্নীতি হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও বক্তা ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, বর্তমান সরকারের দুর্নীতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, অতীতে কোনো সরকারের আমলেই এত পরিমাণ দুর্নীতি আর হয়নি।
তিনি সম্প্রতি অর্থনৈতিক সংকটে পড়া দেশ শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসের উদাহরণ টেনে বলেন, শ্রীলঙ্কান প্রেসিডেন্ট দুপুরের খাবার খেতে বাসার গিয়ে আর অফিসে ফিরে আসতে পারেননি। সরকারি বাসভবনে ঢুকে পড়েছিল হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। এর পর থেকে মূলত আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। বাংলাদেশেও এমন ঘটনা আস্বাভাবিক কিছু না।
রেজা বলেন, বিনা পরীক্ষায় বাংলাদেশে শিক্ষার্থীরা যেমন জিপিএ-৫ পাচ্ছে, ঠিক তেমনি বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়ে এমপি ও মন্ত্রীরা এখন গণতন্ত্র চর্চা করছেন। দেশে এখন আর কোনো গণতন্ত্র নেই। দেশের গণতন্ত্র ফেরাতে হলে অবিলম্বে একটি নিরপেক্ষ, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠ নির্বাচন দিতে হবে। এজন্য দেশের সাধারণ মানুষের পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি। মার্কিন রাজনীতিবিদদের কাছে বারবার গিয়ে দেশের বর্তমান অবস্থার কথা জানানোর জন্য তিনি প্রবাসীদের অনুরোধ করেন।
১৪ বছরেও বাবা শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যার কোনো বিচার হয়নি আক্ষেপ প্রকাশ করে রেজা কিবরিয়া বলেন, আমার বাবাকে সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যেরবাজারের এক জনসভায় গ্রেনেড হামলায় হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডে কোন দল জড়িত ছিল, তা জানতে আমি আগ্রহী নই। আমি সত্যটা জানতে চাই। কারা এই হত্যাকাণ্ডের মদদদাতা ছিল? ঢাকায় বসে কারা জড়িত ছিল এবং এলাকায় যারা জড়িত ছিল এবং গ্রেনেডের উৎস কি, এই প্রশ্নগুলো অনেক আগে তুলেছি। এই দুই প্রশ্নের উত্তর কোনো দিনও পাইনি। সেদিন তদন্তকারীদের রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত করেছে, এটাও সবাই জানে।
কারা প্রভাবিত করেছে এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, যারা ক্ষমতায় ছিল। আওয়ামী লীগ এটা করেছে। বিএনপি ঠিক মতো কাজ করেনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারে দুইজন ইউজলেস লোক ছিলেন। ফখরুদ্দীন আহমেদ বলে একজন দুষ্টু লোক ছিলেন, যিনি দেশের অনেক ক্ষতি করেছেন। আরেকজন ছিলেন জেনারেল মঈন। তারা এই হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেননি ইচ্ছাকৃতভাবে।
ড. রেজা বলেন, আমার বাবা হত্যাকাণ্ডে অনেকেই জড়িত। কিছু লোক টাকার বিনিময়ে কাজ করেছে, কিছু লোক রাজনৈতিক কারণে কাজ করেছে। এক দলে যে এটা হয়েছে, তা আমি মনে করি না। ওনার (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) দলের ভেতরে যদি ভালো করে তাকান, তিনি হয়ত বুঝতে পারবেন, ঘটনাটি কী ঘটেছে বা তিনি উপলবদ্ধি করতে পারবেন, ঘটনাটি আসলে কী ঘটেছিল। আমার বাবাকে কারা হত্যা করেছে, তিনি এটা খুব ভালো করে জানেন।
ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, আমি বিদেশে বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক সংস্থায় বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে বড় বড় পদ-পদবি ছেড়ে দেশে ফিরেছি শুধু দেশের মানুষের সেবা করার উদ্দেশে। আমার মনে হয়েছে, নিজ দেশের জনগণের জন্য কাজ করার সময় এসেছে।
তিনি আরও বলেন, গণফোরাম ছেড়ে দিলেও আমার বাবা শাহ এএমএস কিবরিয়ার মতো আমিও জনগণের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চাই। বাংলাদেশে যারা গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে, আমি তাদের সঙ্গে কাজ করে যাব।
আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনেই গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থী দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তবে শেখ হাসিনার অধীনে বা আমলে কোনো নির্বাচনে নয়।
ড. রেজা কিবরিয়া অর্থনীতিবিদ হিসেবে বিদেশি নানা সংস্থায় কাজ করছেন। বাবার মৃত্যুর পর তার মা আসমা কিবরিয়া যে প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করতেন, দেশে ফিরে তাতেও সক্রিয় হন তিনি।
বাংলাদেশ প্রোগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স অব নর্থ আমেরিকার (বিডিপানা) প্রতিষ্ঠাতা মোয়াজ্জেম কাজী, সদস্য মাহমুদ রহমান এবং সাজ্জাদ হোসেনসহ অন্য সদস্যরা সেমিনারের জন্য সর্বাত্বক সহযোগিতা করেছেন। বোস্টন ও পার্শ্ববর্তী বেশ কয়েকটি শহরের প্রচুর সংখ্যক বাংলাদেশি এ সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply