তাসলিমা আক্তার: দাম্পত্য জীবন হল টেস্ট ম্যাচ। এখানে প্রতিদিন পিচের রং বদলায়। প্রথমদিকে যতটা সহজে বল ব্যাটে আসে, পরের দিকে কিন্তু পরিস্থিতি তেমন থাকে না। যত দিন গড়ায়, ভাঙতে থাকে পিচ। আর সেই সব ‘ক্র্যাকে’ বল পড়লেই একের পর এক গুগলি! এই সময় ব্যাটসম্যান ধৈর্যশীল না হলেই চিত্তির! সটান উইকেট খুইয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরতে হয়। তাই বিবাহিত জীবনের প্রতিটি ধাপে নিজেদের সম্পর্কের দিকে কঠোর নজর রাখতে হয়। নইলে কখন যে চেনা মানুষটি সম্পূর্ণ অচেনা হয়ে যাবে, তা ধরতে পারবেন না। এমনকী তিনি আপনাকে ছেড়ে অন্য কারও সঙ্গেও মন দেওয়া-নেওয়া সেরে ফেলতে পারেন। যাকে বাহারি শব্দে পরকীয়া বলা হয়।
মনে রাখবেন, স্ত্রী পরকীয়ায় জড়ালে স্বামীর জীবনে নেমে আসে ঘনকালো মেঘের ছায়া। এই দুর্যোগের দিনে চারিদিক কেমন অচেনা লাগে। জীবনের উপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে যায়। বিশেষজ্ঞদের কথায়, কোনও নারী হঠাৎ করেই পরকীয়ায় জড়ান না। এর পিছনে লুকিয়ে থাকে অনেকগুলি সুপ্ত কারণ। সেই কারণগুলিকে প্রথমে চিহ্নিত করে ফেলতে পারলেই, বিপদের আগাম অনুমান করা সম্ভব। সেই মতো আগেভাগে সমস্যা সমাধানের চেষ্টাও করা যেতে পারে।
১. কম বয়সেই বিয়ে
প্রেমের দমকা বাতাসে ভাসতে ভাসতে অনেকে খুব কম বয়সেই বিয়ে করে নেন। তখন হয়তো কিছু বোঝা যায় না। তবে পরবর্তী সময়ে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে জীবনে।কম বয়সে বিয়ে করা দম্পতিরা সাধারণত অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হন। তাই বিয়ের পর দায়িত্বের চাপে তারা অতিরিক্ত পরিশ্রম করেন। এনাদের মোটামুটি নিজের পায়ে দাঁড়াতে দাঁড়াতে মধ্য ৩০ পেরিয়ে যায়। আর নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পরই এই মহিলাদের মনে হতে পারে যে সম্পর্কের চাপে তারা নিজের জীবন বাঁচতেই পারেননি। এই মানসিকতা থেকেই তারা হঠাৎ করে অন্যের প্রেমে পড়ে যেতে পারেন।
২. বিয়ে করে ফেঁসে গিয়েছেন
এখনও এদেশে নারীদের বিয়ে নিয়ে পরিবারের লোকজন অতিরিক্ত প্রভাব খাটান। কিছু ক্ষেত্রে তো নারীদের পছন্দ-অপছন্দের তোয়াক্কাই করা হয় না। পরিবারের পছন্দের ব্যক্তির সঙ্গেই তাদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। নারীরা এই বিয়েতে সহমত না হয়ে পারেন না। কিন্তু মনের কোণে কোথাও একটা ক্ষোভ রয়ে যায়। অপছন্দের পুরুষের সঙ্গে তারা সংসার করে সুখী হন না। তাই বিয়ের পর অনেক ক্ষেত্রেই পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন তারা।
৩. সংসারের চাপ
এদেশে এখনও কিছু বস্তাপচা ধারণা পালিত হয়। আজও কিছুজন বিশ্বাস করেন যে সংসার মাত্রই তার দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করবেন শুধু নারীরা। জুতো সেলাই থেকে চণ্ডিপাঠ, সব দায়িত্ব এসে বর্তায় স্ত্রীর উপর। আর পুরুষ মাত্রই গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াবেন। সংসারের এই একঘেয়েমি একটা সময় নারীদের সহ্যের সীমা পার করে দেয়। তখন তারা এমন কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন যারা তাকে সম্মান দেন। এই ফাটল থেকেই শুকিয়ে যাওয়া প্রেমের গাছের জায়গায় ধীরে ধীরে মাথা তোলে পরকীয়ার চারা। তাই সংসার বাঁচাতে চাইলে স্বামীদের এমন ভুল এড়িয়ে চলাই উচিত। সংসারের দায়িত্ব নিজেদের কাঁধেও তুলে নিন। স্ত্রীকে সম্মান, ভালোবাসা দিন। দেখবেন সুখেই কেটে যাবে বাকি জীবনটা।
৪. ঘনিষ্ঠতার অভাব
একটা সময়ের পর দাম্পত্যে ঘনিষ্ঠতা হারিয়ে যায়। মনের পাশাপাশি শারীরিকভাবেও দূরে চলে যেতে থাকেন দম্পতীরা। এই দূরত্বের প্রভাব সরাসরি তুফানের মতো আছড়ে পড়ে নারীদের মনের উপর। তাদের সংসারে আর মন টেকে না। দুমুঠো অক্সিজেনের খোজে তারা অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে পড়েন। তাই নিজেদের মধ্য়ে ঘনিষ্ঠতা কমলে দ্রুত ব্যবস্থা নিন। নইলে ঘটনাপ্রবাহ অন্যদিকে যেতে পারে। তখন কিন্তু কেদেও কুল পাবেন না!
৫. সম্মান না দেয়া
নারীরাও মানুষ। তারাও ভালো কাজের জন্য প্রশংসা আশা করেন। বিশেষত, স্বামী তাকে সম্মান করুক, এটা তাদের প্রাথমিক চাহিদার মধ্যে পড়ে। তবে অনেক পুরুষই মেল ইগোর কারণে এই কাজটা করেন না। এমনকী স্ত্রীকে তাচ্ছিল্লের চোখে দেখেন। দিনের পর দিন এমন দুর্ব্যবহার সইতে সইতে এক সময় মন বিদ্রোহ করে ওঠে। তখন যেই তাকে একটু সহানুভূতি দেন, মন তার দিকে উদ্দাম গতিতে দৌড়ে যায়।। এর থেকেই শুরু হয় পরকীয়া। তাই দয়া করে স্ত্রীকে অসম্মান করার ভুল কাজটা করবেন না।
Leave a Reply