ইমরান মাহমুদ,সিলেট থেকে: সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। নামতে শুরু করেছে পানি। সোমবার সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি সব কটি পয়েন্টেই কমেছে। তবে এখনও বেশির ভাগ এলাকা প্লাবিত রয়েছে। এদিকে পানি কমতে থাকায় ভেসে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র।বন্যায় সিলেটে ধান ও মাছের পাশাপাশি সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় জেলার প্রায় ৫৮২ কিলোমিটার সড়ক ডুবে যায়। এর মধ্যে সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রায় ২৫০ কিলোমিটার, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ২৬৭ কিলোমিটার এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীন ১০ সড়কের ৬৫ কিলোমিটার পানিতে তলিয়ে যায়। এসব সড়কের বেশির ভাগই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ভেঙে গেছে দুটি কালভার্টও।
বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব সড়কের ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ফুটে উঠছে। তবে এখন পর্যন্ত বেশির ভাগ সড়ক পানির নিচে ডুবে থাকায় ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নিরূপণ করতে পারেনি সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ), স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) এবং সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)।
এদিকে প্লাবিত এলাকার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত, পুনর্নির্মাণ, ক্ষতিগ্রস্ত বাসাবাড়ির তালিকা প্রণয়ন এবং নগরকে বন্যামুক্ত রাখতে করণীয় নির্ধারণের লক্ষ্যে একটি উচ্চতর সমন্বয় কমিটি গঠন করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন। রোববার মহানগরের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এ কমিটি গঠন করা হয়।
এলজিইডির অধীন সিলেট জেলার ১০টি উপজেলার ১১১টি সড়কের ২৬৭ কিলোমিটার পানিতে তলিয়ে যায়। এসব সড়ক অনেক জায়গায়ই ভেঙে গেছে। এখন পর্যন্ত এই দপ্তরের হিসাবে বন্যায় ১৭২ কোটি ২৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এলজিইডি সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইনামুল কবীর বলেন, ‘সড়কগুলোতে পানি থাকায় এখন ক্ষয়ক্ষতির পুরো চিত্র জানা যাবে না। পুরো চিত্র জানতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। তবে বন্যায় আমাদের ১১১টি রাস্তার ২৬৭ কিলোমিটার অংশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া সদর উপজেলা ও কোম্পানীগঞ্জে ২টি কালভার্ট ভেঙেছে।’
এলজিইডির অধীন কানাইঘাট উপজেলার কানাইঘাট-সুরাইঘাট সড়ক। রোববার ওই সড়কে গিয়ে দেখা যায়, পানির তোড়ে স্থানে স্থানে ভেঙে গেছে সড়ক। সড়কের মাঝখানেই তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্তের। পানি উঠে যাওয়া বেশির ভাগ সড়কেরই এমন অবস্থা বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এলজিইডির সিলেট কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, বন্যায় জেলার গোয়াইনঘাটে ২৭টি সড়কে ৮২ দশমিক ১৩ কিলোমিটার, কানাইঘাটে ১৫টি সড়কে ৩০ দশমিক ৫ কিলোমিটার, জৈন্তাপুর উপজেলার ১১টি সড়কে ৩২ কিলোমিটার, সদরের ১২টি সড়কে ২১ দশমিক ৩৮ কিলোমিটার, গোলাপগঞ্জে ১০টি সড়কে ২২ কিলোমিটার, কোম্পানীগঞ্জে চারটি সড়কে ৩৪ দশমিক ৬৩ কিলোমিটার, দক্ষিণ সুরমার চারটি সড়কে সাড়ে তিন কিলোমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জে একটি সড়কে দেড় কিলোমিটার, ওসমানীনগর উপজেলায় একটি সড়কের প্রায় দেড় কিলোমিটার ও বালাগঞ্জে একটি সড়কে দেড় কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অন্যদিকে সওজের সিলেট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রায় ৬৫ কিলোমিটার সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। এখনও পানি পুরোপুরি না নামায় ক্ষয়ক্ষতির হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে তলিয়ে যাওয়া সব সড়কই সংস্কার করতে হবে।’
সওজ কার্যালয় সূত্র জানায়, সারি-গোয়াইনঘাট সড়কের ১২ দশমিক ৪০ কিলোমিটার, সিলেট-তামাবিল-জাফলং সড়কের ১ দশমিক ২০, কানাইঘাটের দরবস্ত-কানাইঘাট-শাহবাগ সড়কের ১৪ দশমিক ৮০ এবং সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের ৬ দশমিক ৫০ কিলোমিটার পানির নিচে ছিল।
এ ছাড়া সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার রশিদপুর-লামাকাজি সড়ক, কোম্পানীগঞ্জ-ছাতক সড়ক, শেওলা-সুতারকান্দি সড়ক এবং বিমানবন্দর-বাদাঘাট-কুমারগাঁও সড়কের বিভিন্ন জায়গা পানিতে তলিয়ে গেছে।
বন্যায় তলিয়ে গেছে সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকার ১৪টি ওয়ার্ডের ২৫০ কিলোমিটার সড়ক।সড়কসহ বন্যার সামগ্রিক ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী বিধায়ক রায় চৌধুরী।
রোববার দুপুরে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে সভার আয়োজন করে সিলেট সিটি করপোরেশন। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে এই সভায় ভার্চুয়ালি অংশ নেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
এ প্রসঙ্গে সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সোমবার বলেন, ‘আগামী বর্ষায় যাতে বন্যার পানি মহানগরে প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য মহানগরের যেসব এলাকায় নদীর পাড় নিচু সেসব পাড় উঁচু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ ছাড়া সুরমা নদী খননের জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।’
মেয়র আরও বলেন, ‘নগরের প্লাবিত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, বাসাবাড়ির তালিকা প্রণয়ন ও করণীয় বিষয়ে একটি প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এ লক্ষ্যে সিটি করপোরেশন, সওজ এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি উচ্চতর কমিটি গঠন করা হয়েছে।’সৌজন্যে : নিউজ বাংলা
Leave a Reply