আল ফাতাহ মামুন,ঢাকা থেকে: জাবের অ্যান্ড জুবায়ের ফ্যাব্রিকস লিমিটেডের বিরুদ্ধে তুরাগ নদের বিভিন্ন অংশ ভরাট করে মিনি চিড়িয়াখানা ও বাগান তৈরির অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। হাইকোর্টে এক রিটের জন্য করা বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনেও বিষয়টি উঠে এসেছে।
রাজধানীর চারপাশের নদ-নদী রক্ষায় ওয়াকওয়ে ও সীমানা পিলার নির্মাণের বিশেষ প্রকল্প নিয়ে ২০১১ সালে কাজ শুরু করে বিআইডব্লিউটিএ। প্রকল্পটির দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ ২০১৫ সালে শুরু হয়ে চলতি বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্প-সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, তুরাগ তীরে ৬০০ মিটার ওয়াকওয়ে ও সীমানা পিলার নির্মাণে বাধা দিচ্ছে নোমান গ্রুপের জাবের অ্যান্ড জুবায়ের ফ্যাব্রিকস লিমিটেড। ২০১৬ সালে দায়েরকৃত এক রিট মামলার (রিট পিটিশন নম্বর ১৩৯৮৯/২০১৬) জন্য বিষয়টি নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন গাজীপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। সেখানেও জাবের অ্যান্ড জুবায়ের ফ্যাব্রিকস লিমিটেডের তুরাগ তীর ও নদী দখলের চিত্র উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গুদারাঘাটের পূর্ব প্রান্ত থেকে নোমান গ্রুপের জাবের অ্যান্ড জুবায়ের ফ্যাব্রিকস লিমিটেডের সীমানা শুরু। শিল্পপ্রতিষ্ঠানটির দক্ষিণ দিকে অর্থাৎ নদীর দিকে কাঁটাতারের বেড়া রয়েছে। পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানটি মোট ২ হাজার ১৪৫ ফুট দীর্ঘ। কারখানার সীমানা প্রাচীর থেকে শুরু করে পূর্বদিকে ৪৫৫ ফুট পর্যন্ত নম্বরবিহীন চারটি সীমানা পিলার দেখা গেছে। পিলারগুলো পাগাড় মৌজার সিএস ৪৯৩, ৪৯৪, ৪৯৫, ৪৯৬ ও ৪৯৭ দাগের সীমায় অবস্থিত। এ ৪৫৫ ফুট পর্যন্ত নকশায় নদীর সিএস লাইন এবং তীরভূমির সীমা একই রেখায় দেখানো হয়েছে। তবে সরেজমিন তদন্তে দেখা গেছে, এখানে সিএস লাইন থেকেও ওপরের দিকে অন্তত ১৫ ফুট পর্যন্ত নদীর তীরভূমির সীমা বিস্তৃত। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে নকশায় বিষয়টি উল্লেখ নেই। বাস্তবতার নিরিখে যদি নকশায় তীরভূমির সঠিক চিত্রায়িত করা হতো তাহলে নোমান গ্রুপের জাবের অ্যন্ড জুবায়ের ফ্যাক্টরি কর্তৃক মাটি দিয়ে ভরাট করে তৈরীকৃত বাগান এবং ফ্যাক্টরির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লান্ট এখানে অবৈধ স্থাপনা হিসেবে চিহ্নিত হতো। চারটি পিলার থেকে ২০৪ ফুট পূর্বে আরেকটি পিলার রয়েছে। পিলারটি নদীর সিএস লাইন থেকে ১৫ ফুট ভেতরে। এর মধ্যে ১০ ফুট ওই শিল্পপ্রতিষ্ঠানের দখলে। সরেজমিন দেখা গিয়েছে, সেখানে নদী ভরাট করে বাগান নির্মাণ এবং কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে জাবের অ্যান্ড জুবায়ের ফ্যাব্রিকস।
বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, জাবের অ্যান্ড জুবায়ের ফ্যাব্রিকসের মিনি চিড়িয়াখানাটিও তুরাগের ১০ ফুট ভেতরে নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া পাগাড় মৌজার সিএস ৪১০ নম্বর দাগের সীমানায় নদীর অভ্যন্তরে ২০ ফুট পর্যন্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানটির দখলে রয়েছে। ঠিক এর একশ ফুট পূর্বে নদীর সিএস লাইন পরিমাপের সুবিধার্থে একটি পয়েন্ট স্থির করা হয়। এখানে শিল্পপ্রতিষ্ঠানটির পানির ট্যাংকের কোনা স্থাপিত হয়েছে। তদন্তে দেখা গেছে, এখানে নদীগর্ভের অন্তত ৩০ ফুট শিল্পপ্রতিষ্ঠানটি দখল করে বাগান নির্মাণ করেছে। বাগানের সীমানা আগে বিআইডব্লিউটিএর অভিযানে ভেঙে ফেলা হয়েছিল।
এছাড়া পাগাড় মৌজার ৫১৮ দাগের সীমানায় ১২ ফুট, ৫২১ দাগের সীমানায় ১৫ ফুট, ৫২২ দাগের সীমানায় ১০ ফুট এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠানটির ডিএমডি অফিসের পূর্ব পাশ থেকে ১০ ফুট নদীগর্ভ অবৈধভাবে ভরাট করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
এসব দখল উচ্ছেদ করতে না পারায় ওয়াকওয়ে নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছে বিআইডব্লিউটিএ। সংস্থাটির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর) এবং প্রকল্প পরিচালক আবু জাফর মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ কবির বলেন, জাবের অ্যান্ড জুবায়ের ফ্যাব্রিকস লিমিটেড নদী দখল করে রেখেছে। এজন্য আমরা ওয়াকওয়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারছি না। এ নিয়ে মামলা চলমান রয়েছে। মামলার রায়ও ঘনিয়ে এসেছে। রায় নদীর পক্ষে এলে আমরা উচ্ছেদ অভিযানে নামব।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে নোমান গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জুবায়ের বলেন, এ বিষয়ে মামলা চলমান রয়েছে। তাই এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করা সমীচীন নয়।
Leave a Reply