নজরুল ইসলাম,ঢাকা থেকে: রমজান এলেই পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার ‘সংস্কৃতি’ বহুদিনের। এবার তাই রমজান আসার আগেই নড়েচড়ে বসেছে সরকার। বাজার মনিটরিং নিয়ে আগেই সতর্ক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
সূত্র জানিয়েছে, গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নিত্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ও অবৈধ মজুতের বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। দেশে কর্মরত তিনটি গোয়েন্দা সংস্থাকে নজরদারি করতে বলা হয়েছে। রমজানে পণ্যের মূল্য যাতে না বাড়ে এ জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোকে যথাযথ দায়িত্ব পালনের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এবছরও চাল, আটা, তেল চিনিসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। ভরা মৌসুমেও সবজির দাম নিম্নবিত্তের নাগালের বাইরে। বাম্পার ফলন, পর্যাপ্ত আমদানি এবং নানা কর্মসূচির পরও চালের বাজার অস্থির। এ নিয়ে হতাশ মন্ত্রীরাও। সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে আমদানিনির্ভর পণ্য ছাড়া সকল পণ্যের দাম সার্বিকভাবে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে দাবি করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ২০০৭ থেকে ঢাকার বাজার তদারকির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ২৮টি মনিটরিং টিম রয়েছে। একজন উপ-সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তার নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের একজন ম্যাজিস্ট্রেট, একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, অর্থ, খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের একজন করে কর্মকর্তা এবং আনসার, পুলিশ ও র্যাবের সমন্বয়ে গঠিত এই সব টিম সারা বছর মাঠে থাকার কথা থাকলেও মূলত রমজানকে কেন্দ্র মাঠে কার্যকর ভূমিকা পালনে সচেষ্ট হয়।
রমজানের বাজার নিয়ন্ত্রণে যা মোটেও পর্যাপ্ত নয়। এসব টিম নিয়মিত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বেঠক করা ছাড়াও অনিয়মের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের টিম ছাড়াও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর. ঢাকা সিটি করপোরেশন, র্যাব এবং জেলা প্রশাসনের একাধিক টিম বাজার মনিটরিংয়ে কাজ করে। যে কোনও পণ্য আমদানি থেকে শুরু করে উৎপাদনসহ পাইকারি ও খুচরা মূল্য মনিটরিং করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
তিনি জানিয়েছেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করার চেষ্টা করছি। আমাদের লক্ষ্য একটাই—রমজানে মানুষ যেন ভালো থাকে। সাধারণ মানুষের জন্য এটা সরকারের একটা প্রতিশ্রুতি।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মাঠপর্যায়ে তদারকি জোরদার করতে সকল জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকেও একই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীদের কাছেও সহযোগিতা চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
এদিকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উদ্যোগে ঢাকা মহানগরীসহ বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে বাজার মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। অধিদফতর থেকে এ জন্য বিভিন্ন পর্যায়ের ভোক্তা অধিকার কমিটির কাছে চিঠি দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
খাদ্য অধিদফতরের ওএমএস কার্যক্রমও চলমান। সেখানে ৩০ টাকা কেজি দরে চাল এবং ১৮ টাকায় আটা সরবরাহ করা হচ্ছে। পাশাপাশি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত টিসিবি সারা দেশে ট্রাক সেলের মাধ্যমে সয়াবিন তেল, চিনি, মসুর ডাল ও পেঁয়াজ সরবরাহ করছে। এ তালিকায় আসন্ন রমজানে ছোলা ও খেজুর যুক্ত হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, দেশে বছরে ২০ থেকে ২২ লাখ মেট্রিক টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। তবে রমজানে বাড়তি আরও আড়াই লাখ টনের চাহিদা দেখা দেয়। বছরে চিনির চাহিদা ১৮ লাখ মেট্রিক টন হলেও রমজানে তা আরও তিন লাখ মেট্রিক টন বাড়ে। একইভাবে ছোলার চাহিদা দেড় লাখ টন থেকে বেড়ে দুই লাখ ৩০ হাজার টন হয়।
দেশে এমনিতে পেঁয়াজের চাহিদা ২৪ লাখ টন। উৎপাদিত পেঁয়াজের পরিমাণ ২৩ লাখ টনের কিছু কম-বেশি। তবে এর মধ্যে ৭ থেকে সাড়ে ৭ লাখ টন পচে যায়। এই ঘাটতি মেটাতেই আমদানি করা হয় ৮-১০ লাখ টন। তবে এ বছরের চিত্র ভিন্ন। দেশে পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানান, রোজার সময় অনৈতিক কিছু হতে দেওয়া যাবে না। কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং চলবে। কোথাও অসামঞ্জস্য কিছু দেখলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবে ভ্রাম্যমাণ আদালত। শবে বরাতের পর থেকেই বাজারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। কোনও পণ্যের ঘাটতি নেই।
Leave a Reply