রাবেয়া সুলতানা,ঢাকা থেকে: জ্বালানি তেলের (ডিজেল ও কেরোসিন) দাম বাড়িয়েছে সরকার। লিটার প্রতি এক লাফে বেড়েছে ১৫ টাকা। এর ফলে কৃষি ও পরিবহনে ব্যয় বাড়বে। ইতোমধ্যে আন্দোলনের মুখে গণপরিহনে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে ২৭ শতাংশ।এই মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য ও বিদ্যুতের দামেও পড়বে। যার ধকল সাধারণ মানুষকে সইতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়ার পর এর প্রতিবাদে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস-ট্রাক চলাচল বন্ধ রাখে পরিবহন মালিকদের সংগঠন। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রোববার গণপরিবহনের ভাড়া বাড়িয়েছে সরকার। ফলে পরিবহন মালিকদের লোকসানের কোনো ঝুঁকি নেই। তারা পুষিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু ডিজেলের দাম ও গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানো হলেও সাধারণ মানুষের রোজগার তো আর বাড়েনি। বাড়েনি শ্রমিক ও চাকরিজীবীদের বেতন।
গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধির খবরেই অসন্তোষ দেখা দিয়েছে যাত্রীদের মধ্যে। সোমবার সকালে সংবাদ সম্মেলন করে যাত্রীবান্ধব ভাড়া পুনঃনির্ধারণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, বর্ধিত ভাড়া মালিকদের স্বার্থরক্ষার জন্য নির্ধারিত বলে আমরা তা প্রত্যাখ্যান করছি। ডিজেল ও কেরোসিন তেলের দাম বৃদ্ধির প্রসঙ্গে শঙ্কা প্রকাশ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছে। এর ফলে দেশের একটি অংশের মানুষের আয় কমেছে। এরমধ্যে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাবে সাধারণ মানুষের জীবনে কঠিন বিপর্যয় নেমে আসবে।
এ বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ফাহমিদা খাতুন বলেন, করোনার কারণে অর্থনীতি এমনিতেই একটু সংকুচিত অবস্থায়। সেখানে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি বাড়াবে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে কৃষক থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তের মানুষ বেশি ভোগান্তির শিকার হবে। এর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে অনেক খাতে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা বলেন, প্রথম প্রভাব পড়বে কৃষকের ওপর। কৃষকদের একটা বড় খরচ হয় সেচ কাজে। সেখানে ডিজেলের ব্যবহার রয়েছে। ফলে বেড়ে যাবে উৎপাদন ব্যয়। এরপর যখন সে এই পণ্য ট্রাক কিংবা নৌযানে পরিবহন করবে, আরেক দফা তাকে বাড়তি টাকা গুনতে হবে। ফলে শাক-সবজি থেকে শুরু করে যে সব পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে বাজারে আসে, তার সবেরই দাম বাড়বে। ফলে ভোক্তাদের ওপর অতিরিক্ত একটা চাপ তৈরি হবে।
অন্যদিকে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে প্রভাব পড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি তেল ব্যবহার করা হয়। সুতরাং এই পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সার্বিক সক্ষমতায় চাপ পড়তে পারে।
গত ৩ নভেম্বর থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য প্রতি লিটারে ভোক্তা পর্যায়ে ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে। এটা গত বুধবার মধ্যরাত থেকেই কার্যকর হয়েছে।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে এবং এই ঊর্ধ্বগতির কারণে সরকার এ দাম সমন্বয় করেছে।
ভুক্তভোগী জনসাধারণের ভাষ্য- সরকার বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি দিচ্ছে। অথচ হুটহাট করে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দেয়। ভোক্তা পর্যায়ে এই বর্ধিত দাম জীবন-জীবিকার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। কারণ বেশির ভাগ মানুষ নির্দিষ্ট উপার্জনের ওপর নির্ভরশীল। চাকরি হোক বা ব্যবসা। আয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সংসার খরচের একটা বাজেট করে চলতে হয়। সেক্ষেত্রে একই উপার্জনের মধ্যে গণপরিবহনের বাড়তি ভাড়ার ধকল সইতে হবে শ্রমজীবী মানুষকে।
Leave a Reply