ঢাকা ব্যুরো: গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে চলমান আন্দোলন এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখবে বিএনপি। এ কথা জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রবিবার (১২ মে) বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলীয় সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি। গত ৮ মে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, তথাকথিত উন্নয়নের দোহাই দিয়ে যে রাষ্ট্রব্যবস্থায় নৈতিকতা এবং মূল্যবোধকে বিসর্জন দেওয়া হয়, জনগণের কাছে সেটি উন্নত রাষ্ট্র হিসাবে বিবেচিত হয় না। মনে রাখা প্রয়োজন, জীবন এবং জীবিকার দ্বন্দে জীবিকার কাছে যেন জীবন হেরে না যায়। তেমন একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যেই চলমান আন্দোলন এবং জনগণের এই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত বিএনপির আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র ঢাকা সফর এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, কে আসলো না আসলো এটা নিয়ে বিএনপি আগ্রহী না। বাংলাদেশের জনগণই আমাদের ভরসা। আমাদের পুরো আস্থা (জনগণ)। সেই আস্থার ওপরেই আমরা দাঁড়িয়ে থাকি।
মির্জা ফখরুল বলেন,সরকার মনে করেছে নির্বাচনের পর সংকট উতরে গেছে। কিন্তু সংকট উতরে যায়নি, সংকট আরও গভীর হয়েছে। নির্বাচনের পূর্বে বহু নেতাকর্মীকে একতরফা সাজা দিয়েছে আদালত। বিনা শুনানিতেও সাজা দিয়েছে সরকার। এখনও গুরুত্বপূর্ণ নেতা কারাগারে রয়েছে। সরকারের সাজানো চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে সাজা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বিরাজনীতিকরণ করতে ২ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিরোধী রাজনৈতিক দল যেন না থাকে। মানুষের সর্বশেষ আশা ভরসার স্থল হচ্ছে কোর্ট, কিন্তু সেখানেও কেউ কোন প্রতিকার পাচ্ছে না।
দেশে প্রবেশের সময় আমদানি পণ্যের মান যাচাই করা উচিত দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, জনগণের ম্যান্ডেটহীন সরকার তা করবে কী না আমরা যথেষ্ট সন্দিহান।এ সরকারের কোন জবাদিহিতা নেই, কোন ম্যান্ডেট নেই। তাদের মধ্যে দাম্ভিকতা কাজ করছে। কারণ তাদের জনগণের কোন দরকার নেই”।
৫২৭টি ভারতীয় পণ্যে বিষাক্ত উপাদান পাওয়া গেছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রতিটি দেশেরই উচিত, নিজ নিজ দেশে আমদানি পণ্য পৌঁছার পর পণ্যের নিরাপত্তা মান পরীক্ষা করা। আমদানি করা পণ্য সংশ্লিষ্ট দেশে পৌঁছা মাত্রই জনগণের ক্রয়ের জন্যে বাজারে পাঠিয়ে দেওয়া উচিত নয়। কারণ, এর আগেও ২০২২ এবং ২০২৩ সালে ১২১টি ভারতীয় পণ্য মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল কিন্তু তারপরেও পণ্যের উৎস দেশটি এই পণ্যগুলো ত্রুটিমুক্ত করার জন্য জন্য কোনও উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
মির্জা ফখরুল, হংকং এবং সিঙ্গাপুর তাদের দেশে ভারতীয় কোম্পানি এমডিএইচ ও এভারেস্ট স্পাইসেরে গুঁড়া মসলা বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। সিঙ্গাপুরও দেশটির বাজার থেকে এভারেস্টের গুঁড়া মশলা প্রত্যাহার করার নির্দেশ দিয়েছে। হংকং ভারতীয় দুই কোম্পানির গুঁড়া মশলায় ক্যান্সার সৃষ্টিকারী রাসায়নিক ইথিলিন অক্সাইড শনাক্ত হওয়ার পর দেশ দুইটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে সভা মনে করে, জনগণের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশেরও উচিত দেশে আমদানি করা প্রতিটি পণ্য বাজারে ছাড়ার আগে যথাযথভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা পণ্যের মান যাচাই করে নেওয়া।
আমদানি করা পণ্য যথাযথভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষার ব্যাপারে নিশ্চিত না হওয়া গেলে প্রতিটি নাগরিককে নিজের এবং নিজেদের পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য রক্ষায় নিজ উদ্যোগেই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার বাংলাদেশকে পরিকল্পিতভাবে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে, এটি অনেক আগে থেকেই বলে আসছি। একটি রাষ্ট্র ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়, যখন অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে যায়, রাজনীতির পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়। গোটা রাষ্ট্র একটি নৈরাজ্যে পরিণত হয়েছে। ঘুষ ছাড়া চাকরি হয় না। তাও আবার ক্ষমতাসীন দলের ছাড়া সম্ভব নয়। সরকারের এমপি মন্ত্রীরা টাকা পাচার করে সেটি বিনিয়োগ করেছে বিদেশে অথচ দেশের মানুষের অবস্থা খারাপ।
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন,বাংলাদেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এটি বললে আওয়ামী লীগের গায়ে জ্বালা ধরে যায়। কিন্তু এটি ট্রু সত্য। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। সার্বক্ষণিক মেডিকেল পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।
Leave a Reply