কমিউনিটি প্রতিবেদক : ফেঞ্চুগঞ্জ কল্যাণ সমিতি ইউকের ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন আয়োজন নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে পাশ কাটিয়ে নির্বাচন প্রস্তুতি কমিটি একটিমাত্র প্যানেলের প্রার্থীদের দিয়ে সম্পূর্ণ অসাংবিধানিকভাবে একতরফা নির্বাচন আয়োজনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংবাদ সম্মেলনে এই ধরনের অসাংবিধানিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে নির্বাচন প্রস্তুতি কমিটির সদস্যদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন সংগঠনের একাংশের নেতৃবৃন্দ।
গত ৩০ মে মঙ্গলবার বিকেলে লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব কার্যালয়ে ফেঞ্চুগঞ্জ সমিতি ইউকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর খান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের নির্বাহী সদস্য জুবের আহমদ। বক্তব্য রাখেন ও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ফেঞ্চুগঞ্জ কল্যাণ সমিতি ইউকের সহ সভাপতি সহিদুল ইসলাম, সহ-সভাপতি এনামুল হক চৌধুরী, সহ সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক রেখী, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলমগীর, সহকোষাধ্যক্ষ বদরুল ইসলাম রাজা, নির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর নির্বাচিত কার্যকরী কমিটি হিসেবে আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব গ্রহণ করার পর সাংবিধানিক মেয়াদ ৩ বছর পরিপূর্ণ হওয়ার পর ৩০ অক্টোবর ২০২২ সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভায় নতুন একটি কমিটি উপহার দেওয়ার লক্ষ্যে তিন সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন প্রস্তুতি কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই তিন সদস্য হলেন যথাক্রমে সমিতির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহ ফজলুর রব সুহেল, সহ-সভাপতি গোলাম মোস্তফা ও সাধারণ স¤পাদক জাহাঙ্গির খান।
এরপর ১৬ জানুয়ারি ২০২৩ নির্বাহী কমিটি ও এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এক সভায় উক্ত নির্বাচন প্রস্তুতি কমিটির তিন সদস্যকে সহযোগিতা করার লক্ষ্যে আরো ৭ ব্যক্তিকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। তাঁরা হলেন কাজি নোমান, আফতার আহমদ, আলী আহমদ খান, কাপ্তান মিয়া, আবু সামী, আ ফ ম আতাউল গনী ও আলিম উদ্দিন। তখন নির্বাচন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় সবমিলিয়ে ১০জন। উক্ত সভায় তিনজন নির্বাচন কমিশনারও মনোনীত করা হয়। তাঁরা হলেন, যথাক্রমে বিশিষ্ট কমিউনিটি নেতা সাংবাদিক কে এম আবু তাহের চৌধুরী, নিউহ্যাম কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি স্পিকার ব্যারিস্টার নাজির আহমেদ ও জাষ্টিস বেলায়েত হুসেনকে।
কিন্তু এর পরেই ঘটে বিপত্তি। নির্বাচন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য (সমিতির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি) শাহ ফজলুর রব সুহেল অপর দুই সদস্য যথাক্রমে সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর খান ও সহসভাপতি গোলাম মস্ত ফাকে পাশ কাটিয়ে সহযোগী ৭ সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন প্রস্তুতির কাজ শুরু করেন। শুধু তাই নয়, তারা নির্বাচন কমিশনকেও এড়িয়ে চলেন। তারা সংবিধান বহির্ভূত কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েন। সদস্য নবায়ন ফি ২৫ পাউন্ডের পরিবর্তে ৫০ পাউন্ড, নির্বাচনে বিভিন্ন পদের নমিনেশন ফি ৫০০ পাউন্ডের পরিবর্তে ১৫০০ নির্ধারণ করেন, যা গত নির্বাচনের তুলনায় তিনগুণ বেশী।
উক্ত ঘোষণা সম্বলিত খবর সমিতির ওয়াটসআপ গ্রুপে প্রচারিত হলে অনেকেই এর বিরোধিতা করেন। উক্ত নির্বাচন প্রস্তুতি কমিটির বরাবরে সমিতির ওয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সাধারণ সদস্যদের পক্ষ থেকে তিনটি চিঠি প্রেরণ করা হয়। তাদের কাছে অনুরোধ করা হয় সাধারণ সদস্যদের ডেকে আলোচনা সাপেক্ষে ফি নির্ধারণ করার জন্য। কিন্তু এতে তারা কোনো কর্ণপাত করেননি।
পরবর্তীতে তাদেরকে সংবিধান পরিপন্থি কাজ থেকে থামাতে ফেঞ্চগঞ্জের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে ২২ জনের একটি প্রতিনিধি দল তাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু এতেও তারা কোনো কর্ণপাত করেননি। তারা একতরফা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভারে তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। যার ফলে গত নির্বাচনে যেখানে সমিতির সদস্য সংখ্যা ছিলো ৬০১ জন। এ বছর তাদের নিকট সদস্য সংখ্যা নিবন্ধন হয়েছে মাত্র ১২৩ জন।
এমতাবস্থায় তারা নির্বাচন কমিশনের সাথে কোনো যোগাযোগ ছাড়াই আগামী ৪ জুন ২০২৩ তারিখে নির্বাচন অনুষ্ঠানের তারিখ ঘোষনা করে দেন। এই নির্বাচনের জন্য মাত্র একটি প্যানেল নমিনেশন জমা দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনবিহীন এই নির্বাচনের কোনো প্রতিদন্ধিতা নেই। আমেজ নেই। উচ্ছাস নেই। ফেঞ্চুগঞ্জের বৃহত্তর জনসাধারণের অংশগ্রহণ অনুপস্থিত।
তাছাড়া, তারা ফেঞ্চুগঞ্জ কল্যাণ সমিতির ওয়াটসআপ গ্রুপে প্রচার করেছেন সদস্য ফি ও মনোনয়ন ফি বাবদ ১৮ হাজার ৬০৫ পাউন্ড সমিতির নামে তোলা হয়েছে। যা সমিতির একাউন্টে জমা না করে নির্বাচন প্রস্তুত কমিটির নেতৃবৃন্দ বেআইনীভাবে নিজেদের কাছে রেখেছেন। এটা সম্পূর্ণ সংবিধান পরিপন্থি।
উল্লেখ্য, ইউকে সফররত ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম এই একতরফা নির্বাচন হচ্ছে জেনে বিষয়টা সমাধানের লক্ষ্যে কিছু সময় চেয়ে নেন। এর ১৩ দিন পর তিনি দেশে ফিরে যাওয়ার আগের দিন ১১ জন ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানান, নির্বাচন প্রস্তুতি কমিটির সদস্যগণ কাজি নোমান, আফতার আহমদ, আলী আহমদ খান, কাপ্তান মিয়া, আবু সামী, আ ফ ম আতাউল গনী ও আলিম উদ্দিন তাঁর সাথে এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি। আমরা জানতে পেরেছি, তিনি তাদেরকে বলেছেন প্রাচীন এই সমিতি ক্ষতিগ্রস্ত হলে আপনারা দায়ী থাকবেন।
উপরোল্লেখিত বিষয়সমূহকে সামনে রেখে গত ১৬ মে ২০২৩ ফেঞ্চুগঞ্জ কল্যাণ সমিতি ইউকের কার্যকরী কমিটির এক সভা আহবান করা হয়। ২৩ সদস্য বিশিষ্ট কার্যকরী কমিটির মধ্যে ১৩ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি সমিতির গণ্যমান্য কিছু সদস্যও উপস্থিত ছিলেন। উক্ত বৈঠকে পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, ফেঞ্চুগঞ্জ কল্যাণ সমিতির সংবিধানের ১২নং ধারা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন ছাড়া, প্রস্তুতি কমিটি কর্তৃক নির্বাচন আয়োজন করা স¤পূর্ণ রূপে গঠনতন্ত্র বহির্ভূত।
গঠনতন্ত্রের ধারা-৬ মোতাবেক সাধারণ সদস্যদের নবায়ন ফি এবং নির্বাহী কমিটির নির্বাচনের নমিনেশন ফি নির্ধারণ এবং সদস্য সংগ্রহ ও তালিকা প্রস্তুতকরণ সম্পূর্ণ রূপে নির্বাহী কমিটির ওপর বর্তায়। এসব কাজ করা নির্বাচন প্রস্তুতির কমিটির এখতিয়ার বহির্ভূত।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৪ মে ২০২৩ ফেঞ্চুগঞ্জ কল্যাণ সমিতির নির্বাহী কমিটির আরো একটি জরুরী বৈঠক আহবান করা হয়। বৈঠকে কমিটির সেক্রেটারী, সহসভাপতি, ট্রেজারার সহ ১৩ জন নির্বাহী সদস্য উপস্থিত ছিলেন। যা সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসেবে বিবেচিত।
উক্ত বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচন প্রস্তুতি কমিটির সদস্যদের কাছে এই মর্মে নোটিশ প্রেরণ করা হয় যে, গত ১৬ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে তাদের ওপর নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিল তা থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হলো। কারণ তারা অসাংবিধানিক কাজ করছেন। তারা তাদের কার্যক্রমে বৃহত্তর ফেঞ্চুগঞ্জ কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত করতে পারেননি। নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য যাবতীয় কর্মসূচী নির্বাহী কমিটির নিকট ফিরিয়ে আনা হয় এবং পরবর্তীতে গঠনতন্ত্রের নির্দেশনা মোতাবেক নির্বাহী কমিটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে তাদেরকে নোটিশে জানিয়ে দেওয়া হয়।
এরপর ২৪ মার্চ ২০২৩ তারিখে নির্বাচিত জেনারেল সেক্রেটারি জাহাঙ্গীর খান নির্বাচন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য কাজি নোমান, আফতার আহমদ, আলী আহমদ খান, কাপ্তান মিয়া, আবু সামী, আ ফ ম আতাউল গনী সোনাপাখি ও আলিম উদ্দিনের কাছে চিঠি লিখে সমিতির নামে সংগ্রহ করা ১৮ হাজার ৬০৫ পাউন্ড সমিতির ব্যাংক একাউন্টে ৭ দিনের মধ্যে জমা করার অনুরোধ করেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত তারা এই চিঠির কোনো জবাব দেননি এবং অর্থও সমিতির একাউন্টে জমা দেননি। এ নিয়ে সমিতির বড় একটি অংশ বারবার কথা বলতে চেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন।
ফেঞ্চুগঞ্জ কল্যাণ সমিতি ইউকের গঠনতন্ত্র হচ্ছে এই সংগঠনের মূল পথনির্দেশক। গঠনতন্ত্রকে অনুসরন করেই এ সংগঠন পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হবে। সুতরাং সংবিধান অনুযায়ী এ সংগঠনের নির্বাচিত নির্বাহী কমিটির কোনো বিলুপ্তি নেই। শুধুমাত্র পরবর্তী নির্বাচিত নির্বাহী কমিটির নিকট দায়িত্ব হস্তান্তরের মাধ্যমেই চলমান কমিটির কার্য ক্ষমতার অবসান হতে পারে।
আগামী ৪ জুন ২০২৩ তারিখে নির্ধারিত নির্বাচনের তফশিল অসাংবিধানিক ও ভিত্তিহীন যার সাথে ফেঞ্চুগঞ্জ কল্যাণ সমিতি ইউকের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের কোনো স¤পৃক্ততা নেই। আমরা নির্বাহী কমিটি অতিসত্তর সংবিধানকে অনুসরণ করে সাধারণ সদস্যদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে যাবতীয় ফিস নির্ধারণ করে সদস্য নবায়ন ও তালিকা প্রণয়ন করে নির্বাচন কমিশনের নিকট নির্বাচন পরিচালনার যাবতীয় গঠনতান্ত্রিক দায়িত্ব অর্পণ করে সকলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ গ্রহণ করব। তাই আমরা এ ধরনের অসাংবিধানিক নির্বাচন আয়োজন থেকে বিরত থাকার জন্য আহবান জানাই।
উল্লেখ্য, ফেঞ্চুগঞ্জ কল্যাণ সমিতি ইউকে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত ফেঞ্চুগঞ্জবাসীর মধ্যে প্রাচীন, বৃহৎ এবং স্বনামধন্য একটি সংগঠন যা ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরু থেকে আজ পর্যন্ত ফেঞ্চুগঞ্জের মানুষের কল্যাণে অসামান্য অবদান রেখে চলেছে সংগঠনটি।
যা বললেন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য শাহ ফজলুর রব সুহেল :
এদিকে নির্বাচন প্রস্তুতি কমিটির অন্যতম সদস্য (সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি) শাহ ফজলুর রব সুহেলের সাথে এ ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ফেঞ্চুগঞ্জ সমিতি ইউকের চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত কোনো সংবিধান নেই। তাই আগে থেকেই এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতার ভিত্তিতেই নির্বাচন হয়ে আসছে। বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রথমে তিন সদস্যের প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি তিনজন নির্বাচন কমিশনারও মনোনীত করে। এরপর নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতার জন্য আরো ৭ ব্যক্তিকে সহযোগী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। এই সাতজন মিলে সমিতির নতুন সদস্য নিবন্ধন ও নবায়নের কার্যক্রম সম্পাদন করে। এরপর তারা নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ৩ নির্বাচন কমিশনারের সাথে যোগাযোগ করেন।
মনোনীত কমিশনার জাজ বেলায়োত হোসেন বলেন, তিনি ঘোষিত তারিখে উপস্থিত থাকতে পারবেন না। ব্যারিস্টার নাজির আহমদের সাথে কী কথা হয়েছে তাঁর জানা নেই।
সাংবাদিক কে এম আবু তাহের চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে তাঁর কাছে কিছু অভিযোগ এসেছে। তিনি এ ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছেন।
তিন নির্বাচন কমিশনার দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করায় নির্বাচন কমিশনের ৭ সহযোগীর মধ্যে এলাকার সিনিয়র মুরব্বি জনাব আলী আহমদ খানকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করে নির্বাচনের দিন তারিখ ঘোষণা করা হয়। এখন এই ৭ জনই আগামী ৪ জুন নির্বাচন পরিচালনা করবেন।
Leave a Reply