নিউইয়র্ক প্রতিনিধি :নিউ ইয়র্কে গত ২০ মে শনিবার দিনভর ছিলো তুমুল বৃষ্টি। এই ঘনঘোর বাদলদিনের দুপুরে বাসায় খিচুড়ি-ইলিশ মাছ ভাজা খাব, একটু পর পর পেছনের বাগানে নিরন্তর ঝরে পরা বৃষ্টির জলধারা দেখব, বিকেল হলে কালো কফিতে চুমুক দিতে দিতে
সত্যজিৎ রায় এর কোন সিনেমায় চোখ পেতে রাখব; এমনটাই স্বাভাবিক। কিন্তু না, বৃষ্টিমূখর ছুটির দিনের এইসব আয়েশী অনুষঙ্গ উপেক্ষাকরে আমি সেদিন ছুটে গিয়েছিলাম “ঊনবাঙাল” এর ৩৬ তম সাহিত্যসভায়। কারণ, আমন্ত্রণটা ছিলো এই শহরে আমার
দু’জন প্রিয় মানুষের পক্ষ থেকে।বলছি, সমকালীন বাংলা সাহিত্যের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কবি, লেখক কাজী জহিরুল ইসলাম এবং কবিপত্নী, ঊনবাঙাল এর সভাপতি, দূর্দান্ত গুনি নারী মুক্তি জহিরের কথা।গত ক’বছরে এই দু’জনের সাথে এমনই আত্মার সম্পর্ক হয়েছে যে তাদের ডাক উপেক্ষা করা কঠিন।
জহির ভাই এবং মুক্তি আপার অনুষ্ঠান যে শুরু থেকে শেষ অব্দিপ্রাণময় আলোর বিভায় পূর্ণ থাকবে সে আমি জানি। এবারও ছিলো তেমনই অনিন্দ্য এক সন্ধ্যা। প্রথমেই মন কেড়েছে, এস্টোরিয়ার
জালালাবাদ ভবনে পরিবেশবিদ ফজলু ভাই-ভাবীর দরদি অভ্যর্থনা। তারপর সভাপতি মুক্তি জহির এর মায়াভরা আতিথেয়তায় চার ঘন্টার অত্যন্ত প্রাণবন্ত “ঊনবাঙাল সাহিত্য সভা”। ঊনবাঙাল কে ভালোবেসে সাহিত্যমোদীরা এসেছেন বৃষ্টি মূখর সন্ধ্যায়। ঊনবাঙাল এর জন্য সাহিত্যমনস্ক
মানুষেরা এভাবেই ছুটে আসবেন বারবার।প্রবাসের মাটিতে অনেক প্রতিকুলতা পেরিয়েও ঊনবাঙাল যেভাবে অব্যাহত রেখেছে সুস্থ-শুদ্ধ সাহিত্যের চর্চা, বাঙালির শেকড় সংস্কৃতির অন্বেষণ, তাকে প্রণতি জানাতেই হয়।
সেই সন্ধ্যায় রবীন্দ্রসাহিত্যের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে আমাদের যখন বৈঠকি আলাপচারিতা চলছিলো, মন্ত্রমুগ্ধের মত সবাই শুনছিলাম, কবি কাজী জহিরুল ইসলাম এর দূর্দান্ত পর্যালোচনা,এমন সময় প্রথম আলো নর্থ আমেরিকার সম্পাদক ইব্রাহীম চৌধুরীর সাথে সভায় এলেন বাংলা সাহিত্যের বরেণ্য লেখক
আমাদের প্রিয় আনিস ভাই, সাথে তার সহধর্মিণী প্রিয় মেরিনা ইয়াসমিন আপা।সাহিত্যসভার আনন্দ যেন ষোলকলা পূর্ণ হল।আনিসুল হক, এই সময়ে রবীন্দ্রসাহিত্যের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে দারুণ কিছু বললেন।মন্ত্রমুগ্ধের মত উপভোগ করলাম সবাই।
সত্যিকারের প্রাণবন্ত এই সাহিত্য সন্ধ্যার প্রতিটি পর্ব আমি উপভোগ করেছি। লেখক-গবেষক আব্দুল্লাহ জাহিদ এর রবীন্দ্রাভাবনার বিশ্লেষণ ছিলো ভীষন সময়োপযোগী।মুগ্ধ হয়েছি এটা দেখে যে এই সভায় যোগ দেবার জন্য ড. উপালি সুদূর
ফ্লোরিডা থেকে ছুটে এসেছেন।সভায় প্রত্যেকের পরিবেশিত আবৃত্তি, লেখা, কবিতা সবকিছুই প্রাণময়তায় পূর্ণ ছিলো।সমাপনী পর্বে, কবি কাজী জহিরুল ইসলাম এত নান্দনিকভাবে সকলের লেখার পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা করলেন, সেটি ছিলো আরো
ভালোলাগার।সেদিন প্রাণে প্রাণে মিলেছিলাম আমরা সবাই ঊনবাঙাল কে ভালোবেসে।ঊনবাঙাল এর ছায়ায় আমরা সবাই মিলে রচনা করেছিলাম পরমানন্দ সময়।
Leave a Reply