নাজমুল ইসলাম :বাংলাদেশে প্রবাসীদের হয়রানি বন্ধ ও তাদের বিনিয়োগ সুরক্ষরা দাবি জানিয়েছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী ব্যবসায়ীরা। ১৬ মে লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিঃ-এর যুক্তরাজ্য প্রবাসী ৮ পরিচালক এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। যার মধ্যে ৭ জন গত বছর বাংলাদেশে হয়রানিমূলক মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন এবং ৮ দিনের কারাবাস শেষে জামিনে ছাড়া পেয়েছিলেন। এসব বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে প্রবাসীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের পথ অবিলম্বে বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি দাবি জানান। তাঁরা বলেন, বাংলাদেশে প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে মিথ্যা মামলা দায়েরের ঘটনা ঘটে। এসব মামলার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা। প্রবাসীদের বিনিয়োগ আত্মসাৎ করতে দুর্নীতিবাজরা মিথ্যা মামলা দায়েরকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। যাতে প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা মামলার ভয়ে বিনিয়োগ রেখে দেশ ছাড়ে। নিজেদের গ্রেফতার ও কারাবরণের নেপথ্যে এমন দূরভিসন্ধি কাজ করেছে বলে মনে করেন তাঁরা। জানান, আগের মামলার নিষ্পত্তি হওয়ার পর আবারও নতুন করে দুটি মামলা এবং একটি রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী এসব বিনিয়োগাকরী বলছেন, আইন মানুষের জান–মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য। কিন্তু এই আইনকে যদি হয়রানির অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়, অন্যের সম্পদ দখলের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়–সেটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির যুক্তরাজ্য প্রবাসী এসব বিনিয়োগকারী হলেন: ভাইস চেয়ারম্যান জামাল মিয়া, পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক, পরিচালক কামাল মিয়া, পরিচালক আব্দুল আহাদ, পরিচালক আব্দুল হাই, পরিচালক জামাল উদ্দিন, পরিচালক এম এ রব ও পরিচালক ফয়জুল হক।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক। তাঁরা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগকারী যুক্তরাজ্য প্রবাসী আরও অনেকেই এই সংবাদ সম্মেলনের দাবির সাথে একাত্মতা পোষণ করে উপস্থিত হন।
লিখিত বক্তব্যে তাঁরা বলেন, হোমল্যান্ড লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভায় যোগ দিতে গেলে গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্য প্রবাসী এই ৭ পরিচালককে ঢাকার মতিঝিলে কোম্পানির প্রধান কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পুলিশ। গ্রেফতারের কোনো কারণও ব্যখ্যা করেনি পুলিশ। কেবল বলেছে, ‘আপনাদের সঙ্গে কথা আছে’। থানায় নেয়ার পর জানানো হয় মাগুরায় তাদের বিরুদ্ধে ২৭টি মামলা হয়েছে। বীমার টাকা না পেয়ে হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চার গ্রাহক এসব মামলা করেছেন।
এসব বিনিয়োগকারী বলেন, “কোম্পানির চেয়ারম্যান ছাড়াও তখন ১০জন পরিচালক ছিলেন। তাদের মধ্যে আমরা ৭জন ব্রিটেনের, একজন থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। চেয়ারম্যান ও দুই পরিচালক থাকেন বাংলাদেশে। কিন্তু বীমার টাকা না পাওয়ায় বেছে বেছে কেবল যুক্তরাজ্য প্রবাসী ৭ পরিচালক এবং একজন শেয়ারহোল্ডারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলো মাগুরার ৪ গ্রাহক। আবার ওই মামলা সম্পর্কে কোনো কিছু জানার আগেই কোম্পানির সভা থেকে আমাদের গ্রেফতার করা হলো— এ ঘটনা থেকে অনুমান করা যায়, এটি কোনো সাধারণ মামলার ঘটনা নয়। এটি প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে কোম্পানি দখলের গভীর কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ।”
তাঁরা প্রশ্ন করেন, গ্রাহক টাকা না পেলে কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে। আর বিষয়টি দেওয়ানি। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা নেয়া হলো কি করে? লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, তাঁরা মামলাগুলো মোকাবেলা করে গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর মাগুলার আদালত থেকে মুক্তি পান। এরপর তাঁরা নতুন করে কোম্পানি পরিচালনার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু বোর্ড মিটিং এলেই তাঁদের বিরুদ্ধে নানাকিছু শুরু হয়ে যায়। তাঁদের জড়িয়ে হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সকে নিয়ে নানা ধরণের মিথ্যা সংবাদ প্রচার করা হয় বাংলাদেশের কয়েকটি কাগজে। ওইসব খবরে যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির ১০৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে বানোয়াট অভিযোগ করা হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে এসব প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবিতে রিট পিটিশনও হয়। এছাড়া গত এপ্রিল মাসে আরও দুটি মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। এই মামলাগুলোও গ্রাহকের টাকা ফেরত না দেয়ার অভিযোগে করা।
তাঁরা বলেন, “আগের মামলা কেবল আমরা ৮ জন যুক্তরাজ্য প্রবাসীর বিরুদ্ধে করা হয়েছিলো। এবারের মামলাগুলোতে যুক্তরাজ্য প্রবাসী ৮জনের পাশাপাশি কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সহ অন্যদেরও রাখা হয়েছে। যাতে মনে না হয় কেবল যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের টার্গেট করা হয়েছে।”
বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে এসব বিনিয়োগকারী বলেন, “আমরা প্রবাসীরা মাতৃভূতির প্রতি ভালোবাসা ও আবেগের টানে সব—সময় যাতায়ত করি, সম্পর্ক রাখি এবং বিনিয়োগ করি। আমরা চাই বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং বাংলাদেশ এগিয়ে যাক। আর সেই অগ্রযাত্রায় আমরা প্রবাসীরা বাংলাদেশের সঙ্গি থাকতে চাই। কিন্তু কিছু কুচক্রি মহল আমাদের বিনিয়োগ আত্মসাৎ করার জন্য আমাদের নানাভাবে হয়রানি করে বাংলাদেশ থেকে তাড়াতে চায়। মিথ্যা মামলা দিয়ে, প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার মাধ্যমে আইনের অপব্যাবহার করে আমাদের হয়রানি করে।”
বাংলাদেশ সরকার, পুলিশ প্রশাসন ও আদালতের কাছে অনুরোধ জানিয়ে তাঁরা বলেন, প্রবাসীদের বিরুদ্ধে মামলা নেয়ার আগে ভালোভাবে খোঁজখবর নেয়া হয়। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা মামলা যাতে কেউ করতে না পারে সেই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। প্রবাসী বিনিয়োগ আত্মসাতের চেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান তাঁরা। বলেন, “প্রবাসীরা রেমিটেন্স যোদ্ধা, বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি। তাই প্রবাসীদের বিনিয়োগকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য সরকারের উচিত কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।”
তাঁরা বলেন, হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা যদি কোনো অন্যায়ের শিকার হয়, তাদের বিনিয়োগ হারায় সেটি বাংলাদেশে প্রবাসী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে চরম খারাপ উদাহরণ তৈরি করবে। হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে বাংলাদেশ সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তাঁরা।
এই ৭ বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে অন্যায়ভাবে গ্রেফতারের শিকার হওয়ার পর যুক্তরাজ্যের বাংলা মিডিয়া, বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনসহ কমিউনিটির পক্ষ থেকে জোরালো প্রতিবাদ হয়েছিলো। তাঁদের মুক্তির দাবি করা হয়েছিলো। দাবি তোলা হয়েছিলো— বাংলাদেশে প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য। এই সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে যুক্তরাজ্যে বাংলা মিডিয়ার সাংবাদিক, কমিউনিটির বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনসহ তাঁদের নিজেদের পরিবার— যে যেভাবে তাঁদের পাশে ছিলেন, সমর্থন ও সহানুভূতি দেখিয়েছেন, মুক্তির দাবি তুলেছেন— সকলের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির এই ৭ পরিচালক।
প্রেস কনফারেন্সে হোমল্যান্ড ইনসুরেনস কোম্পানির ডাইরেক্টরবৃনদের সাথে সংহতি জানাতে উপস্থিত হয়েছিলেন বৃটিশ বাংলাদেশ ক্যটারারস এসোসিয়েশন বই সি এ সভাপতি জনাব এম এ মুনিম অবিই, সাধারণ সম্পাদক মিঠু চৌধুরী ও অলি খান এমবিএ। বিবিসিএ সাধারণ সম্পাদক তফজজুল মিয়া, বিবিসিএ লন্ডন রিজউন্ সাধারণ সম্পাদক কদরুল ইসলাম, নেদারল্যান্ডস বাংলাদেশ সমিতি ইউকে সভাপতি মতিউর রহমান মতিন ও অর্থ সম্পাদক জিয়ার আহমেদ, প্রবাসী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি জাহাঙ্গীর খান, সামাজিক সংগঠক ফয়েজ উদ্দিন এমবিএ, বাংলাদেশ সেন্টার এর সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, সাবেক কাউন্সিলর মুক্তিযুদ্ধা খলিল কাজী, সহ সভাপতি পারভেজ কোরেশী এবং বিবিসিএ অর্থ সম্পাদক মতিন মিয়া সহ আরো অনেকে।
Leave a Reply