কমিউনিটি প্রতিবেদক: হিউম্যান রাইটস এন্ড পীস ফর বাংলাদেশ ইউকে জরুরী ভিত্তিতে প্রবাসীদের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন, প্রবাসীদের এনআইডি প্রদানের দ্রুতকরণ, নো ভিসা স্টাম্প রিকোয়্যারম্যান্ট এবং পাওয়ার অফ অ্যাটর্নী আগের মত প্রদান, পাসপোর্ট পেতে বিলম্ব রহিতকরণ ও বিমানের আকাশচুম্বি ভাড়া কমানোর জোর দাবি জানিয়েছে।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর পূর্ব লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপেল রোডের সোনারগাঁ রেস্টুরেন্টে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “আমরা ২০১৯ সাল থেকে প্রবাসীদের জন্য বিশেষ ট্রাইবুনালের জন্য দাবী করে আসছি। সম্ভবত এর আগে কেউ এ দাবী উপস্থাপন করেন নি। আমরা তখন থেকে এ ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলন, সভা সমাবেশ ও দেশ থেকে আসা এমপি মন্ত্রী ও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের সাথে বিভিন্ন সময় মতবিনিময় করে আসছি। সাথে সাথে আমাদের সংগঠনের প্রেসিডেন্ট এডভোকেট মনজিল মোরসেদ যুক্তরাষ্ট্র সহ বিভিন্ন দেশে প্রবাসীদের সাথে মতবিনিময়কালে এ বিষয়টি উপস্থান করে আসছেন। তাই এ ট্রাইবুনালটি যত দ্রুত সম্ভব গঠন করার জন্য আমরা সরকারের নিকট দাবী জানাচ্ছি । উল্লেখ্য, এ ট্রাইবুন্যাল গঠিত হলে প্রবাসীদের বিভিন্ন সমস্যা বিশেষ করে আদালত সংক্রান্ত বিষয়গুলো ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। যা একজন প্রবাসীর আইনী সুফল পাওয়ার ক্ষেত্রে দারুণভাবে সফলতা আনবে।”
লিখিত বক্তব্যে ‘নো—ভিসা রিকুয়ার্ড’ প্রসঙ্গে বলা হয়, “এ ভিসা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বর্তমানে বাংলাদেশ হাই কমিশনের নিয়মানুযায়ী যাদের বাংলাদেশী পাসপোর্ট, ন্যাশনাল আইডি কার্ড, অথবা যাদের বার্থ সার্টিফিকেট আছে তারা যথাযথ নিয়মে আবেদন করে পেতে পারেন। কিন্ত যাদের এগুলি নেই তারা এ ভিসা পাবেন না। সাথে সাথে তাদের স্বামী স্ত্রী বা সন্তানাদিও পাবেন না। আরেকটি বিষয় হলো একজন বাংলাদেশী বৃটিশ নাগরিক স্বামী স্ত্রী কিংবা সন্তানাদী যদি তাদের স্পাউস অথবা পিতা মাতার পাসপোর্টে নো ভিসা স্টাম্প থাকে সেটাও ভিসা প্রাপ্তীর ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য হবেনা। এমতাবস্থায় অনেকে দেশে যেতে পারছেন না। তাই তাদের মৌলিক অধিকার খর্ব হচ্ছে। আমরা চাই আগের মত যেভাবে এগুলো ছাড়া সেবা দেওয়া হয়েছে সেভাবে দেওয়া হোক।
‘পাওয়ার অব এটর্নী’ ইস্যূ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, “পাওয়ার অব এটর্নীর ক্ষেত্রে বর্তমানে যাদের ব্রিটিশ পাসপোর্ট তারা এ সুযোগ পাচ্ছেন না। তাই তারা নানাভাবে সমস্যায় পড়েছেন। বিশেষ করে দেশে তাদের জমাজমি হস্তান্তরে খুবই বেকায়দায় আছেন। এহেন পরিস্থিতিতে যারা বয়স্ক আছেন বা অসুস্থ আছেন তারা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তাই এ পদ্ধতিতে আরো সহজ করা প্রয়োজন। আমরা চাই আগের মত যেভাবে এই সকল জিনিস ছাড়া সেবা দেওয়া হয়েছে সেভাবেই দেওয়া হোক।”
সংবাদ সম্মলনে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টিকেটের মূল্য কমানোর দাবি জানিয়ে বলা হয়, “বাংলাদেশ বিমান হলো দেশের জাতীয় পতাকাবাহী অন্যতম সংস্থা। এটি একদিকে যেমন তাদের বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালাবে, অন্যদিকে তেমনি জাতীয় সংস্থা হিসাবে জনগণের মৌলিক অধিকারের বিষয়গুলিকে সমুন্নত রাখবে। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে তারা শুধুমাত্র বাণিজ্যিক স্বার্থটাকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে। জনগণ বা প্রবাসীদের ব্যাপারে তারা কোন মানবিক দায়িত্ব প্রদর্শন করছেন না। এর প্রমাণ তাদের আকাশচুম্বি ভাড়া নির্ধারণ, এর ফলে প্রবাসীদের কাছে বিমান টিকেট এখন সোনার হরিণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া ইমার্জেন্সি কোটা থেকে প্রবাসীরা যাতে সুযোগ লাভ করতে পারেন সে ব্যাপারে জোর দাবী জানাচ্ছি।”
“প্রবাসীদের পাসপোর্ট প্রদানে বিলম্ব” প্রসঙ্গে বলা হয়, “প্রবাসীদের জন্য আবেদন করা নতুন পাসপোর্ট পেতে ৬ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত বিলম্ব হচ্ছে। সাথে সাথে নতুন আবেদন ও হাতের লিখা পাসপোর্টের পরিবর্তে এমআরপি জমা নেয়া হচ্ছে না বলে জানা গেছে। তাছাড়া অভিযোগের জন্য বার বার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন। দীর্ঘদিন চলে গেলেও তা সরবরাহ হচ্ছে না। এমতাবস্থায় অনেকে দেশ যাত্রা এবং ভিসা প্রসেসিং এর সুযোগ করতে পারছেন না।”
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশ ইউকের জেনারেল সেক্রেটারী কাউন্সিলর আয়াস মিয়া। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সংগঠনের প্রেসিডেন্ট মোঃ রহমত আলী ও লিগ্যাল সেক্রেটারি সলিসিটর নাবিলা রফিক।
এতে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মোঃ আবুল হোসেন, ট্রেজারার মাওলানা রফিক আহমেদ, অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেজারার মোঃ আব্দুল হান্নান, সাবেক এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি শেখ মুদাব্বির হোসেন মধু মিয়া, কাউন্সিলর মোহাম্মদ ওসমান গনি, বিশিষ্ট কমিউনিটি নেতা সুরুজ্জামান চৌধুরী, সাংবাদিক আব্বাস উজ্জামান, আবু আকমা সবুর, আবুল কাশেম প্রমুখ।
উল্লেখ্য, এ সংবাদ সম্মেলনে সম্প্রতি বাংলাদেশে একটি মামলায় সাতজন প্রবাসীর গ্রেফতার এর বিষয় নিয়েও আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় ও তাদের জন্য হিউম্যান রাইটস এন্ড পিচ ফর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতার আহ্বান জানানো হলে সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় আইনি সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস প্রদান করা হয়।
Leave a Reply