1. admin@ajkallondon.com : Ajkal London : Ajkal London
  2. ajkallondon@gmail.com : Dev : Dev
সব পুড়িয়ে নিভল আগুন - Ajkal London
সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:৩৯ পূর্বাহ্ন

সব পুড়িয়ে নিভল আগুন

রিপোর্টার নাম
  • প্রকাশিত : রবিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৪ বার ভিউ

ঢাকা ব্যুরো :  ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের আমদানি কার্গো ভবনের আগুন প্রায় ২৭ ঘণ্টার চেষ্টায় নিভেছে। এর আগেই ভবনে থাকা আমদানি করা সব পণ্য পুড়ে গেছে। এগুলোর মধ্যে ছিল জীবন রক্ষাকারী ওষুধ তৈরির কাঁচামাল, গার্মেন্টস পণ্য, কম্পিউটার ও মোবাইলের যন্ত্রাংশ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, শিশুখাদ্য, প্রসাধনীসহ বিভিন্ন পণ্য।

ব্যবসায়ীদের দাবি, ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে কয়েক হাজার কোটি টাকা। আগুন নেভানোর পর ওই ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে ফায়ার সার্ভিস। সরকার এরই মধ্যে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সেখানে ব্যবসায়ীদের তথ্য দিতে বলা হয়েছে। এই অগ্নিকাণ্ডসহ মিরপুর ও চট্টগ্রাম ইপিজেডের আগুন নাশকতামূলক কি না, তা খতিয়ে দেখছে অন্তর্বর্তী সরকার।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন এবং বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, আগুনে পুড়ে যাওয়া পণ্যের অর্থমূল্য এবং ওজনভিত্তিক হিসাব তৈরি করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ইনস্যুরেন্স ও সরকারি বিমা ব্যবস্থার আওতায় সহায়তা দেওয়া হবে।

সূত্র জানায়, আমদানি কার্গো কমপ্লেকের কুরিয়ার সার্ভিস অংশ থেকে গত শনিবার বেলা সোয়া ২টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। গতকাল রোববার বিকেল ৫টার দিকে ফায়ার সার্ভিস আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনে। ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, ভবনটি সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ। ভেতরে কিছুই অবশিষ্ট নেই।

শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় কার্গো ভিলেজ থেকে আমদানি পণ্য খালাস বন্ধ ছিল। ফলে গুদামে পণ্য মজুত ছিল বেশি। মজুত থাকা গার্মেন্টস পণ্য, ওষুধের কাঁচামাল, আন্তর্জাতিক কুরিয়ার শিপমেন্ট, মোবাইল যন্ত্রাংশ, প্রসাধনী, শিশুখাদ্যসহ সব পুড়ে ছাই হয়েছে।

গতকাল দিনভর ঘটনাস্থলে ভিড় করেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা। তাঁদের একজন উত্তরার গার্মেন্টস ইনপুট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘ফার্স্ট অ্যান্ড সেফে’র মালিক মো. বেনজির বলেন, হংকং ও চীন থেকে রেডিমেড গার্মেন্টসের দুটি শিপমেন্ট এসেছিল। আগুনে স্যাম্পলসহ সবই পুড়ে গেছে। রোববার (গতকাল) মালামাল খালাসের কথা ছিল। তিনি ছোট ব্যবসায়ী। এটি তাঁর জন্য বিশাল ক্ষতি।

বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইনামুল হক খান বলেন, উচ্চমূল্যের পণ্য ও জরুরি শিপমেন্ট সাধারণত আকাশপথে পাঠানো হয়। আগুনে এসব পণ্য ছাই হয়ে গেছে। এর প্রভাব শুধু বর্তমান রপ্তানিতেই নয়, ভবিষ্যতের ব্যবসায়িক সুযোগেও পড়বে। তাঁর আশঙ্কা, আগুনে পোশাকশিল্পের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১০০ কোটি টাকার বেশি হতে পারে। ইনামুল হক খান বলেন, বিজিএমইএ ইতিমধ্যে ক্ষতির তালিকা তৈরি শুরু করেছে। প্রতিদিন ২০০-২৫০টি কারখানার পণ্য আকাশপথে রপ্তানি হয়। ফলে ক্ষতির পরিমাণ বিপুল হতে পারে।

বিজিএমইএর পরিচালক ফয়সাল সামাদের মতে, পুরো আমদানি সেকশন পুড়ে গেছে। ক্ষতি এক বিলিয়ন টাকার বেশি হতে পারে। বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকেরা দাবি করছেন, ক্ষতি ১০০ কোটি মার্কিন ডলার বা ১২ হাজার কোটি টাকা দাঁড়াতে পারে। বিভিন্ন পণ্যের কাঁচামাল, অ্যাকসেসরিজসহ উৎপাদনসামগ্রী পুড়ে যাওয়ায় কারখানাগুলোর পণ্য তৈরি ও রপ্তানি আটকে যাবে। এতে পরোক্ষ ক্ষতি হবে অনেক।

কেপিআইভুক্ত কার্গো ভিলেজ এলাকার অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা ও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি বলেন, এটি দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্রগুলোর একটি। এমন জায়গায় যদি আগুনে সব পুড়ে যায়, তবে নিরাপত্তাব্যবস্থার দুর্বলতা স্পষ্ট। এখানে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা ছিল কি না, তা তদন্ত করা জরুরি। তিনি বলেন, ‘বহির্বিশ্বে আমাদের যেসব ক্রেতা রয়েছেন, তাঁরাও বেশ উদ্বিগ্ন।’

ধ্বংসস্তূপে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের সরঞ্জাম এবং ওষুধের কাঁচামাল :

আমদানি কার্গো ভবনে আগুনে সেখানে থাকা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১৮ টন বৈদ্যুতিক সরঞ্জামও পুড়ে গেছে। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মমতা ট্রেডিং কোম্পানির বিপ্লব হোসাইন বলেন, ছয় দিন আগে পণ্যগুলো এসেছে, রোববার (গতকাল) খালাসের কথা ছিল। কিন্তু এনওসি পেতে দেরি হওয়ায় খালাসের আগেই সব পুড়ে গেছে।

ওষুধের জন্য আমদানি করা কাঁচামালও পুড়ে গেছে। এতে ওষুধশিল্প প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এমএস জি এস কোম্পানির কর্মকর্তা মাহাতাব উদ্দিন বলেন, তাঁদের আমদানি করা প্রায় এক লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের ওষুধের কাঁচামাল পুড়ে গেছে। তাঁরা দেশের নামীদামি ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর জন্য চীন, ভারত ও জার্মানি থেকে কাঁচামাল আনেন। ভেতরে তাঁদের ২০টি শিপমেন্ট ছিল, সবই পুড়ে গেছে। এসব কাঁচামাল দিয়ে ক্যানসারসহ জীবন রক্ষাকারী ওষুধ তৈরি হতো। এতে ওষুধ উৎপাদনে প্রভাব পড়বে।

ফায়ার সার্ভিসকে দ্রুত ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ:

প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেন, আগুন লাগার কিছুক্ষণ পর ফায়ার সার্ভিস এলেও সঙ্গে সঙ্গে ঢুকতে পারেনি। ৮ নম্বর গেটে তাদের অনুমতির জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এ জন্য বেশ কিছুটা সময় চলে যায়। এই সময়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

তবে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল এই অভিযোগ নাকচ করে বলেন, ‘আমাদের ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। গেটে দেখা গাড়ি হয়তো অন্য সংস্থার ছিল।’

এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন এবং বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, এই অভিযোগ পুরোপুরি সঠিক নয়। বিমানবন্দরের নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ইউনিট ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই কাজ শুরু করেছে। এটি একটি কেপিআই এলাকা, এখানে নিজস্ব ব্যবস্থাও রয়েছে।

আগুনে নেভাতে বেশি সময় লাগার পাঁচ কারণ :

আগুন নেভাতে প্রায় ২৭ ঘণ্টা লাগার জন্য পাঁচটি কারণ বলেছে ফায়ার সার্ভিস। গতকাল বিকেলে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, প্রথমত উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দাহ্য বস্তুর আধিক্য, দ্বিতীয়ত স্টিল স্ট্রাকচারে তাপ শোষণ, তৃতীয়ত অপরিষ্কার ও গাদাগাদি পরিবেশ, চতুর্থত অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি এবং সর্বশেষ ছোট ছোট স্টিলের স্ট্রাকচার কেটে ভেতরে প্রবেশ করতে বেগ পেতে হয়েছে। তিনি বলেন, কার্গো ভিলেজের যে অংশে আগুন লেগেছিল, এর প্রতিটি জায়গা খোপ খোপ করে ভাগ করা ছিল এবং ভেতরে অনেক অংশ স্টিলের তৈরি। স্টিলের কাঠামো দিয়ে একতলা থেকে দোতলা পর্যন্ত আছে, এ জন্য আগুন নেভাতে এত সময় লেগেছে।

তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে যদি অ্যাকটিভ অথবা প্যাসিভ—মানে আমাদের যেকোনো ধরনের ডিটেকশন সিস্টেম থাকত এবং তার সঙ্গে প্রোটেকশন সিস্টেম থাকত, তাহলে হয়তো দুর্ঘটনা এত বড় হতো না। আমাদেরও তদন্ত করে বের করতে হবে, আসলে কখন কীভাবে এই আগুন লাগল।’

ক্ষতিপূরণ দেবে কে :

উড়োজাহাজ থেকে পণ্য নামানো থেকে আমদানিকারকের হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত দায়িত্বে থাকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে অবকাঠামো, নিরাপত্তা ও কার্গো টার্মিনাল তদারক করে। এ জন্য ব্যবহার ও নিরাপত্তা বাবদ আলাদা চার্জ নেয়।সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি খায়রুল আলম ভুইয়া মিঠু বলেন, পণ্যের নিরাপত্তার দায়িত্ব বিমান বাংলাদেশ ও বেবিচকের। চার্জ তারা নেয়, এখন ক্ষতিপূরণ দেবে কে?

ব্যবসায়ীরা বলছেন, অন্য দেশের বিমানবন্দরের চেয়ে বেশি চার্জ নেওয়ার পরও এখানে অবকাঠামো দুর্বল ও নিরাপত্তা ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে এ ধরনের অগ্নিকাণ্ডে বিপুল ক্ষতির দায় এখনো নির্ধারিত হয়নি।

বর্তমানে শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে বছরে প্রায় ১ দশমিক ৭৫ লাখ টন পণ্য পরিবহন হয়, যার ১৭ শতাংশ বহন করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। বাকি অংশ বহন করে এমিরেটস, কাতার, টার্কিশ, ক্যাথে প্যাসিফিক ও ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনস।

নাশকতা কি না, খতিয়ে দেখছে সরকার :

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম ইপিজেড ও রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়ীতে আগুনের ঘটনাগুলো নাশকতামূলক কি না, তা খতিয়ে দেখছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ বিষয়ে তদন্ত ও তদারকির জন্য স্বরাষ্ট্রসচিবকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজমের সভাপতিতে গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা স্থায়ী নির্দেশিকা’ সংক্রান্ত বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক সূত্র জানায়, দেশের কেপিআইভুক্ত এলাকাগুলোর অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা যথাযথ আছে কি না, তা যাচাই করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রাজধানীসহ সারা দেশের বহুতল ভবন, শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও বিপণিবিতানগুলোতেও অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা কার্যকর আছে কি না, তা যাচাই করে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।বৈঠক শেষে ত্রাণ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।আগামী ৫ নভেম্বর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা স্থায়ী নির্দেশিকা-সংক্রান্ত পরবর্তী বৈঠক হবে। এর আগেই কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

আমদানি পণ্য খালাস ও রাখার বিকল্প ব্যবস্থা :

হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে আমদানি পণ্যের খালাস কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ অস্থায়ীভাবে তৃতীয় টার্মিনালে জিএসই মেইনটেন্যান্স (গ্রাউন্ড সাপোর্ট ইকুইপমেন্ট) এলাকা পণ্য সংরক্ষণের জায়গা হিসেবে নির্ধারণ করেছে। সেখানে শুল্কায়নপ্রক্রিয়া শেষে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ পণ্য খালাস করছে।

উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, আপাতত আমদানি পণ্য তৃতীয় টার্মিনালে রাখা হবে। আগুনের কারণ অনুসন্ধানে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা বিভিন্ন সংস্থা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদন দেবে।

Google News

নিউজ শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর