1. admin@ajkallondon.com : Ajkal London : Ajkal London
  2. ajkallondon@gmail.com : Dev : Dev
সিলেটে তীব্র খাবার সংকট, বন্যা পরিস্থিতির অবনতি - Ajkal London
মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৪৭ পূর্বাহ্ন

সিলেটে তীব্র খাবার সংকট, বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

রিপোর্টার নাম
  • প্রকাশিত : সোমবার, ২০ জুন, ২০২২
  • ১৭০ বার ভিউ

সিলেট সংবাদদাতা : সিলেটের বন্যা উপদ্রুত এলাকায় তীব্র খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। চলছে নৌকার জন্যও হাহাকার। বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হওয়ায় গত শনিবার থেকে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড সিলেট ও সুনামগঞ্জে পানিবন্দি লোকজনকে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছে। সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর আরও কয়েকটি দল সিলেট ও সুনামগঞ্জে আসছে বলেও জানিয়েছেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার। সকাল থেকে সিলেট নগরীর উঁচু এলাকায় ঢুকতে শুরু করে বন্যা ও বৃষ্টির পানি। সিলেট রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে পানি উঠে যাওয়ায় সিলেট থেকে সরাসরি ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। গ্রিডে পানি উঠায় পুরো সিলেট জেলার বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়া হলেও রাতে প্রায় ৭০-৮০ ভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ চালু হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগ।

খাবারের তীব্র সংকট :
সিলেটের বন্যা কবলিত এলাকায় খাবারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। কোম্পানীগঞ্জের সাংবাদিক আব্দুল জলিল গত শনিবার কোম্পানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানিয়েছেন, সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ বঙ্গবন্ধু মহাসড়কে অনেক মানুষ অস্থায়ী আশ্রয় নিয়েছে। মানুষের সাথে রয়েছে গরু-ছাগলও। পাড়ুয়া, ভোলাগঞ্জ, কলাবাড়ি ও বালুচর আশ্রয়কেন্দ্রে প্রচুর মানুষ। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে খাবারের তীব্র সংকট। স্থানীয় লোকজন তাদের মধ্যে রান্না করা খাবার বিতরণ করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত সরকারি কোন ত্রাণ সহায়তা পৌঁছেনি বলে জানান সাংবাদিক জলিল।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. জফির সেতু জানান, তিনি শুক্রবার কোম্পানীগঞ্জের বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরেছেন। অনেক মানুষ গত ৪ দিন ধরে ক্ষুধার্ত বলে জানান এ অধ্যাপক।এছাড়া, বন্যা কবলিত এলাকায় খাবারের পাশাপাশি পয়:নিষ্কাশনেরও সমস্যা হচ্ছে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।কেবল কোম্পানীগঞ্জ নয়, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, ছাতক, দোয়ারাবাজারেও খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে।প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণের মজুদ আছে। কিন্তু, পরিবহনের অভাবে ত্রাণ মানুষের কাছে পৌঁছানো যাচ্ছে না। সিলেট জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম জানান, শুকনো খাবার ভর্তি ৫টি ট্রাক তারা পাঠাতে পারছেন না শুধুমাত্র যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে। তিনি জানান, সরকারের কাছে যে পরিমাণ ত্রাণ চাওয়া হচ্ছে, সেই পরিমাণ ত্রাণ পাওয়া যাচ্ছে।

নৌকার জন্য হাহাকার :
বন্যা কবলিত সিলেট ও সুনামগঞ্জে নৌকার জন্য হাহাকার চলছে। অতিরিক্ত টাকা দিয়েও মিলছে না নৌকা। এই সুযোগে অনেক নৌকার মাঝি ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া হাঁকাচ্ছে। এ কারণে পানিবন্দি লোকজনের উদ্ধার তৎপরতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।ছাতক উপজেলা শিক্ষা অফিসার পুলিন চন্দ্র রায় জানান, বন্যার কারণে বৃহস্পতিবার তিনিসহ তার আরো দুই সহকর্মী অফিসে আটকা পড়েন। গত শুক্রবার ৫ হাজার টাকায় একটি বলগেট নৌকা ভাড়া করে তারা তিনজন কোম্পানীগঞ্জ হয়ে সিলেটের টুকেরবাজারে এসে পৌঁছেন। এরপর তিনি নগরীর টিলাগড়ের বাসায় পৌঁছেন। তিনি জানান, নৌকা মালিকরা ডিজেলের অজুহাতে নৌকা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে।

সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক-দোয়ারাবাজার) আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক জানান, নৌকার অভাবে তিনিও ছাতক যেতে পারছেন না। গত শুক্রবার একটি নৌকা ম্যানেজ হলেও শেষ পর্যন্ত ডিজেলের অভাবে নৌকাটি আসতে পারেনি। এই সুযোগে অনেক নৌকার মাঝি ১৫-২০ হাজার টাকা করে ভাড়া চাচ্ছে বলে জানান তিনি। লোকজন বলছে, ‘খানি লাগবে না, আমাদেরকে আগে উদ্ধার করেন’-যোগ করেন এমপি মানিক।

সিলেটের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শেইড ট্রাস্টের ম্যানেজিং ট্রাস্টি মুহাম্মদ দিলওয়ার হোসাইন জানান, উপদ্রুত এলাকায় নৌকার অভাবে তারা ত্রাণ বিতরণে যেতে পারছেন না। এ অবস্থায় শনিবার তারা সিলেটের বালাগঞ্জ থেকে ৪টি নৌকা এক সপ্তাহের জন্য ভাড়া করে নিয়ে এসেছেন। এসব নৌকা দিয়ে কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, সিলেট সদর ও ছাতকের পানিবন্দী লোকজনকে উদ্ধার কাজে ব্যবহার করা হবে বলে জানান তিনি।

সিলেট জেলা প্রশাসনের প্রেস উইং থেকে গত  শনিবার সকালে সহকারী কমিশনার আহসানুল আলম জানান, সিলেটে বন্যার্তদের উদ্ধারে সিলেট ও সুনামগঞ্জে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি নৌবাহিনীও কাজ শুরু করেছে। এছাড়া, বিমান বাহিনীর দুটি হেলিকপ্টারও উদ্ধার কাজে যুক্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘নৌবাহিনী চলে এসেছে। ৩৫ জনের একটি ডুবুরী দল কাজ শুরু করেছে। বিকেলে ৬০ জনের আরেকটি বড় দল এসেছে। কোস্ট গার্ডের দুইটি ক্রুজ দুপুরের পর এসেছে। একটি সুনামগঞ্জ যাবে এবং একটি সিলেটে উদ্ধার কাজে নিয়োজিত হবে। এছাড়া বিমান বাহিনীর দুটি হেলিকপ্টার উদ্ধার কাজে নিয়োজিত থাকবে।

তিনি জানান, নৌবাহিনীর একটি দল সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নে কাজ করছে এবং অপর একটি দল কোম্পানীগঞ্জের দিকে রয়েছে। এছাড়া, সেনাবাহিনী সিলেট সদর, কোম্পানীগঞ্জ এবং গোয়াইনঘাটে উদ্ধার কাজে নিয়োজিত রয়েছে বলে জানান ম্যাজিস্ট্রেট আহসান।

সিলেট রেলস্টেশন প্ল্যাটফর্মে পানি উঠে পড়ায় সিলেট রেলস্টেশন থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিলেট থেকে ২০ কিলোমিটার দূরবর্তী ফেঞ্চুগঞ্জের মাইজগাঁও রেলস্টেশন থেকে ট্রেন চলাচল করবে।সূত্র জানায়, রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে পাশাপাশি স্টেশনের প্রবেশ পথে কোমর সমান পানি।

সিলেট রেলওয়ে শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ৬ ইঞ্চি পরিমাণ পানি। এ অবস্থায় সিলেট থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি জানান, সিলেট স্টেশন থেকে শনিবার সকালে যথারীতি আন্ত:নগর জয়ন্তিকাসহ অন্যান্য ট্রেন ছেড়ে গেছে।ফেঞ্চুগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের গুডস সহকারী মো: নাঈমুর রহমান জানান, মাইজগাঁও থেকে বিকেল ৫টায় আন্ত:নগর পারাবত এবং রাত ১২টার পর আন্ত:নগর উপবন ছেড়ে যায়। দুই ট্রেনেই ৩-৪শ’ যাত্রী ছিল বলে জানান তিনি।
এর আগে রানওয়েতে পানি উঠে পড়ায় শুক্রবার বিকেলে সিলেট থেকে বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। আগামী ২০ জুন পর্যন্ত সিলেট এমএমজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান চলাচল বন্ধ থাকবে বলে সিলেট হবিগঞ্জে ম্যানেজার হাজিফ আহমদ জানিয়েছেন।

৬ ঘন্টা পর সিলেট নগরীর কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক হয়েছে। বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো), সিলেট-এর জনৈক কর্মকর্তা জানান, ৩৩ কেভির আওতাধীন কিছু এলাকায় বিদ্যুত সংযোগ স্বাভাবিক হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে এসব এলাকায় বিদ্যুৎ চলে আসে। সবমিলিয়ে সিলেট নগরী ও আশ-পাশের এলাকার ৭০-৮০ ভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক হয়েছে। শেখঘাট সাবস্টেশনে আওতাধীন কিছু এলাকায় বিদ্যুত সঞ্চালন বন্ধ রয়েছে। নগরীর মির্জাজাঙ্গাল, মণিপুরী রাজবাড়ি, কুয়ারপার, লালাদিঘীরপার ও দক্ষিণ কাজলশাহের কিছু এলাকা বিদ্যুৎহীন রয়েছে বলে জানিয়েছে বিউবো সূত্র।

এর আগে গত শনিবার বেলা দেড়টায় (বিউবো), সিলেট-এর প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির জানিয়েছিলেন, গ্রিডে পানি ঢুকে পড়ায় দুপুর ১২টা থেকে পুরো সিলেটের বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ রাখা হয়েছে। পানি কমলে ফের গ্রিড চালু করা হবে। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, অনেক সময় এক ঘন্টা বৃষ্টি না হলে গ্রিডের পানি নেমে যায়। পানি নেমে গেলে বিদ্যুৎ সঞ্চালন স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এ প্রকৌশলী। এরপর সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হয়।

বন্যার কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বুধবার থেকে পুরো সুনামগঞ্জে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। এছাড়া,সিলেট নগরীর উপশহর এবং দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি গ্রিডের আওতাধীন এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

সিলেটের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানান, সিলেটে গত শনিবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৫৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে সকাল ৬টা থেকে ৯টা-এই তিন ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৪৭ মিলিমিটার। আর সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ১০ মিলিমিটার। ভারী বর্ষণের কারণে নগরীর অনেক স্থানে তীব্র জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ॥ পানি উন্নয়ন বোর্ড(পাউবো)-এর গত শনিবার সন্ধ্যা ৬টার বুলেটিনে জানানো হয়, সিলেট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৮৯ সেন্টিমিটার ও কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতদিন বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও শেওলা পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ৪৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
সুনামগঞ্জ বিচ্ছিন্ন, ডিসির বাংলো ও সার্কিট হাউসে পানি: বন্যার কারণে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে সুনামগঞ্জ জেলা। সুনামগঞ্জের ডিসির বাংলোয়ও হাঁটু সমান পানি। পানি উঠে পড়েছে সুনামগঞ্জ সার্কিট হাউসেও। ছাতক-দোয়ারাবাজার আসনের এমপি মুহিবুর রহমান মানিক এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, সুনামগঞ্জের ছাতক ও দোয়ারার অবস্থা সবচাইতে খারাপ। বিদ্যুতের অভাবে মোবাইলে চার্জ না থাকায় সুনামগঞ্জের অনেকের সাথেই যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।

গত মঙ্গলবার থেকে সিলেটের সিলেট সদর, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট এবং সুনামগঞ্জের ছাতক, দোয়ারাবাজার ও সুনামগঞ্জ সদরে বন্যা দেখা দিলেও পর্যায়ক্রমে নতুন নতুন এলাকায় বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। সিলেটের বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ এবং সুনামগঞ্জের তাহিরপুর, জগন্নাথপুর, দিরাই, শাল্লা, বিশ্বম্ভরপুরসহ নতুন নতুন এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। তবে, কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট থেকে বন্যার পানি কিছুটা নেমেছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। বিশ্বনাথের ইলিমপুর গ্রামের বাসিন্দা ব্যাংকার সাইফুর রহমান শিকদার জানান, তার বাড়িতে পানি উঠে যাওয়ায় শুক্রবার রাতে তাদেরকে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হয়েছে। পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাশমির রেজা জানান, তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওর সংলগ্ন এলাকা বন্যার পানিতে ভাসছে। ওই এলাকায় শুকনো জায়গা বলতে কিছু নেই। তিনি ওই এলাকায় উদ্ধার তৎপরতা বাড়ানোর তাগিদ দেন।

Google News

নিউজ শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর