সিলেট সংবাদদাতা : সিলেটে সোমবারও ছিলো মেঘে ঢাকা আকাশ। সকালে ঝুম বৃষ্টি হয়েছে।বৃষ্টি হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত আছে। একইসাথে মানুষের কষ্ট, ভোগান্তি ও দুর্ভোগ বেড়েছে কয়েকগুণ।
জানা যায়, সোমবার সকাল ৯টায় সবশেষ তথ্য অনুযায়ী সিলেটে সুরমা নদীর পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টে বিপদসীমা ১০ দশমিক ৮০। সেখানে পানি ১১ দশমিক ৩৫। কানাইঘাট পয়েন্টে রোববার সন্ধ্যা ৬টায় পানি ছিল ১৪ দশমিক ৮ সেন্টিমিটার। সোমবার সকাল ৮টার হিসাব অনুযায়ী সেখানে পানির মাপ ১৩ দশমিক ৯০ সেন্টিমিটার।এদিকে, কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে রোববার পানি বিপদসীমার নিচে থাকলেও সোমবার বিপদসীমার শ‚ন্য দশমিক শ‚ন্য ৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শেরপুর পয়েন্টে পানি বিপদসীমার নিচে।
সোমবার সকালে সরেজমিন দেখা যায়, সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকায় পানি স্থির রয়েছে। কিছু উঁচু এলাকা থেকে পানি নেমেছে। তবে নিঞ্চল এখনো আগের মতোই প্লাবিত। সেখানে কোমর থেকে গলাসমান পানি। বিশেষ করে, নগরের অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত উপশহরের অবস্থা খুবই খারাপ। এ এলাকার অধিকাংশ স্থানে বুক থেকে গলাসমান পানি। এ ছাড়া কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, দক্ষিণ সুরমা, সিলেট সদর, বিশ্বনাথসহ বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকায় এখনো বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত আছে। জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, জেলায় ৪৯৭ টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ ৩০ হাজার ৬৩২ জন আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়া ৩১ হাজার গবাদিপশুকে ঠাঁই দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় পাঁচদিন ধরে আটকে আছেন কয়েক লাখ মানুষ। অধিকাংশ ভবনের নিচতলা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দুই ও তিনতলায় আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে। এ অবস্থায় ভয়াবহ বিপর্যয়ে পড়েছেন সিলেটের মানুষজন। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে থাকা প্রায় আড়াই লাখ মানুষ রয়েছেন তীব্র খাবার সংকটে। এখনো মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রের খোঁজে আছে। সেনাবাহিনী তাদের উদ্ধার ও ত্রাণ বিতরণ এবং চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তবে তা প্রয়োজনের চেয়ে অপ্রতুল। এর মধ্যে নেই বিদ্যুৎ, মুঠোফোনগুলো বন্ধ। এমন ভুতুড়ে পরিস্থিতিতে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রায় ৫০০ আশ্রয়কেন্দ্রে খাদ্য সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, আশ্রয় কেন্দ্রসহ বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ চলছে। তবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় জলযানের সংকটে বিভিন্ন স্থানে ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে।
এদিকে, সিলেট ও সুনামগঞ্জে চারটি মোবাইল অপারেটরের ১১০০টির মাঝে ৬৬০টি সাইট সচল হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বন্যার কারণে গত শনিবার সিলেটের নেটওয়ার্ক ডাউন ছিল। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রোববার এই নেটওয়ার্ক সচল করা হয়েছে। তবে ইন্টারকানেকশনে এখনো সমস্যা রয়েছে। এটি সমাধানে কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়া সুনামগঞ্জে বিটিআরসির নেটওয়ার্ক ডাউন রয়েছে।
বিটিআরসি এর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক বন্যার পানিতে ডুবে থাকায় সুনামগঞ্জে পোর্টেবল জেনারেটর নিয়ে যাওয়া যাচ্ছিল না। তবে রোববার থেকে বন্যার পানি একটু করে কমতে শুরু করেছে। বন্যার পানি কমে গেলে পোর্টেবল জেনারেটর নিয়ে সুনামগঞ্জে বিটিআরসির নেটওয়ার্ক সচল করা হবে।
Leave a Reply