নজরুল ইসলাম,ঢাকা থেকে: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের চেয়ে গণপরিবহনে নারীরা বেশি যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আগামী ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান আঁচল ফাউন্ডেশন পরিচালিত এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
আঁচলের তথ্য বলছে, গণপরিবহনে যৌন হয়রানির শিকার হন ৬৪.৯২ শতাংশ নারী। এই সংখ্যাটি অনলাইন বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারীর হয়রানির মাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে। সমীক্ষা অনুযায়ী, ৪৩.৮৯ শতাংশ নারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হয়রানির শিকার হন। এছাড়াও রেল বা রেলস্টেশনে ৪.৫৮ শতাংশ এবং রাইড শেয়ারিং সার্ভিসে ১.৫৩ শতাংশ তরুণী যৌন হয়রানির শিকার হন।
যৌন হয়রানির মধ্যে আপত্তিকর স্পর্শের শিকার হন ৬৪.৯২ শতাংশ তরুণী। ২০.০৪ শতাংশ কুদৃষ্টি এবং অনুসরণের শিকার হয়েছেন। তরুণীরা যৌন হয়রানির শিকার হন মূলত একাকী চলার সময়, জরিপে শতকরা ৭৫.৬০ শতাংশ তরুণীর বেলায় দেখা গেছে এমনটি।
এছাড়া সমীক্ষায় অংশ নেওয়া মোট তরুণীর ৬৫.৫৮ শতাংশ যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। এর মাঝে ৩৫.৪৯ শতাংশ তরুণী জানিয়েছেন যে তারা বিকৃত যৌন ইচ্ছার প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত বা কুদৃষ্টির শিকার হয়েছেন। ২৯.৬২ শতাংশ তরুণীকে আপত্তিকর স্পর্শের ভুক্তভোগী হতে হয়েছে।
রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথী রোকেয়া জাহান (ছদ্মনাম)। পড়াশোনার পাশাপাশি একটি প্রতিষ্ঠানে খন্ডকালীন চাকুরী করেন। অফিস ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতে উত্তরা থেকে ধানমন্ডি এলাকায় যেতে বাস ব্যবহার করেন তিনি। নিয়মিত বাসে যাতায়াতে ভোগান্তি ছাড়াও বিভিন্ন সময় যৌন হয়রানির শিকারও হয়েছেন রোকেয়া।
নারী দিবসকে সামনে রেখে ‘তরুণীদের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট এবং মানসিক স্বাস্থ্যে এর প্রভাব’ শীর্ষক এ সমীক্ষাটির আয়োজন করা হয়। জরিপে অংশগ্রহণ করেছেন সারা দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগের ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী ১ হাজার ১৪ জন তরুণী।
অংশগ্রহণকারী তরুণীদের ভেতর অবিবাহিত ৮৮.১৭ শতাংশ ও বিবাহিতের সংখ্যা ১০.৯৫ শতাংশ এবং বাকিরা আর সংসার করছেন না। তারা কতটা বৈষম্য, যৌন হয়রানি, সমাজ ও পরিবারে প্রতিবন্ধকতা ইত্যাদি বিষয়ের সম্মুখীন হয়েছেন ও এ বিষয়গুলো তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর কেমন প্রভাব ফেলেছ সেসব তথ্যের সমন্বয় করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
এতে তরুণীদের মানসিক সমস্যার পিছনে বিভিন্ন কারণও উঠে আসে। এরমধ্যে অন্যতম কারণ পারিবারিক টানাপোড়েন। সমীক্ষা বলছে, পারিবারিক টানাপোড়েন তরুণীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর সর্বাধিক প্রভাব ফেলে যা ৩১.৮৫ শতাংশ। আর্থিক অস্বচ্ছলতা অংশগ্রহণকারীদের ২৪.৪৬ শতাংশের মনে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। বেকারত্বের কারণে ১৪.৭৯ শতাংশ মানসিকভাবে বিপর্যস্ততার শিকার হন।
জরিপে আরও উঠে এসেছে, ৬৯.৯২ শতাংশ তরুণী শারীরিক অবয়ব নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্যের শিকার হন। ২৩.৭৭ শতাংশ নিজেদের অসম্মতিতেও পরিবার থেকে বিয়ের চাপের সম্মুখীন হন। ৩৮.৮৬ শতাংশ শৈশবে যৌন নির্যাতনের শিকার। ৪৩.৮৯ শতাংশ অনলাইনে বিড়ম্বনার শিকার। ২২.২৯ শতাংশ তরুণীর মতামত পরিবারে মূল্যায়ণ করা হয় না। শুধুমাত্র নারী হবার দরুণ মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে বাঁধার সম্মুখীন হতে হয় ৪৬.২৫ শতাংশ নারীকে।
Leave a Reply